শেয়ার কেনা-বেচার আগে দেখতে হবে যে ৪টি বিষয়!

সাধারণত, আমরা কোনো বাজারে গেলেও সব জিনিসপত্র দেখেই কিনি। সবজি গুলো ফ্রেশ কি-না, মাছগুলো তাজা কি-না ইত্যাদি। সব জিনিসের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য যে, নির্বাচন করার আগে তার কিছু বিষয়ের ওপর নজর দেয়া জরুরি। এমনই কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনার আগেও কিছু বিষয় জেনে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লং টার্ম ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে একটা কোম্পানি চুজ করার আগে চারটা জিনিস দেখা জরুরি-

  1. Meaning
  2. Moat
  3. Management
  4. Margin of safety

1.Meaning:

” If you don’t want to be the full owner of that company, don’t buy share of that company! “

Phill Town

Phill Town এই কথাটা কেন বলেছেন? বলছি।

প্রথমত, আপনি যে কোম্পানিতে ইনভেস্ট করতে চাচ্ছেন, সেই কোম্পানির কাজের বিষয়বস্তু আপনি ভালো ভাবে বোঝেন কি? বা করতে চান কি! যেমন,

আপনি সিগারেটের ঘোর বিরোধী।  এখন সিগারেটের কোনো কোম্পানিতে যদি আপনি ইনভেস্ট করে বসেন— আপনি সারাক্ষণই এটার বিরোধী মনোভাব নিয়ে থাকবেন। আপনি উন্নতি করতে পারবেন না। শুধু সিগারেট না, হতে পারে কার্বোনেটেড সুগার ড্রিংক জাতীয় পণ্য বা ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে, আপনি এমন কোম্পানিই পছন্দ করবেন যেটার পণ্য বা কাজের বিষয় বস্তু আপনার ভালো লাগে। যেটা নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, যেটা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। এমনভাবে ভেবে আগাবেন, যেন আজকে এই বিজনেসের একটা অংশ হয়েছেন আপনি ঠিকই— কিন্তু একদিন পুরো বিজনেসটার মালিক যেন হতে পারেন!

পুরো বিজনেসের ওনার হবার ইচ্ছে তখনই জাগে, যখন ওই বিজনেসের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালো আগ্রহ থাকে। এছাড়াও, কোম্পানি এমনভাবে চুজ করা উচিত, যেন পুরো কোম্পানির মালিক না হতে পারলেও – ওই কোম্পানির শেয়ার আপনি দশ বছর রেখে দিতে পারেন চোখ বন্ধ করে।

Warren buffer এর একটা রুল আছে যাকে বলে ” The Ten-Ten Rule! “

তিনি বলেন,

I Won’t won this business for 10 minutes, unless I willing to own it for ten years! “

Warren Buffet

Interested in more about Investing? Here's an article you might find helpful. সাইট কেনা-বেচা করুন সবচেয়ে কম খরচে!

2. Moat:

আগেকার দিনে কিছু কিছু শাসক বা রাজা/বাদশাহ্ তাদের প্রাসাদের চারপাশে পরিখা খনন করে রাখতো — এমন ইতিহাস বা গল্প প্রায়ই জানি আমরা। কেন রাখতো তা-ও জানি। যাতে শত্রুপক্ষ খুব সহজে আক্রমণ করতে না পারে!

এটা রাজপ্রাসাদ রক্ষা করার একটি কৌশল। এমনই কৌশল বা বৈশিষ্ট্য আপনার কোম্পানিতেও থাকতে হবে যাতে বাইরের কোনো কম্পিটিটর এসে হুট করে কথাবার্তা ছাড়াই আপনার কোম্পানির কোনো ক্ষতি না করতে পারে।

এমন রক্ষিত কোনো কোম্পানিই পছন্দ করা উচিত৷ এতে আপনারই ভালো!

একটা কোম্পানির মোট আছে না-কি নাই— কিভাবে বুঝবো?

যারা খুব এক্সপার্ট তারা নরমালি ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দেখেই বুঝে ফেলেন ওই কোম্পানির মোট আছে কি-না। 

আবার, নিজেদের পণ্যের ওপর কপিরাইট বা প্রাইভেসি দেয়া থাকলে। যেমন,

একটা ঔষধ কোম্পানির কিছু ইনগ্রেডিয়েন্টস বা পদ্ধতি অন্য কোম্পানি জানবে না। একটা ফুড কোম্পানির রেসিপি অন্য কেউ জানবে না বা তাদের পণ্যের ওপর কপিরাইট দেয়া থাকবে যাতে অন্য কেউ সেটা ব্যবসায় উদ্দেশ্যে ব্যবহার বা তৈরী না করতে পারে। সো, একটা কোম্পানির মোট আছে কি নেই জানতে তার পাঁচটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।

  1. ROIC (Return on invested capital) দেখতে হবে। এগুলো দেখতে হয় ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অর্থাৎ, মাসিক বা বার্ষিক আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
  2. Equity Growth.
  3. EPS Growth.
  4. Safe Growth.
  5. Cash flow Growth.

3. Management:

আপনি যে কোম্পানি সিলেক্ট করবেন সেটার পরিচালনায় দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গ কোম্পানিটিকে ভালো ভাবে পরিচালনা করছেন কি-না এটা লক্ষ্য করা ভীষণ জরুরি।

তারা কি কোম্পানির অন্যান্য ওনারদের জন্য চিন্তা করছেন না-কি তাদের এগেইন্সটে কাজ করছেন। অনেক সিইও আছেন যারা একটা কোম্পানির সব Owner দের কথা চিন্তা করে কাজ করেন৷ আবার অনেকে এগুলো ভাবেনই না। শুধু নিজের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত থাকেন।

সিইও / ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভালো কি-না বোঝার জন্য আপনাকে দেখতে হবে তার সম্পর্কে কোনো কন্ট্রোভার্সি আছে কি-না,  সে কি ভাবে কোম্পানি আগাতে চায় ইত্যাদি।  এগুলো জানার জন্য ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দেখতে পারেন।

কোম্পানির বার্ষিক আয় কত, যদি লস হয়ে থাকে তা-ও অনেস্টলি বলবে। এমন লস কখনো তা কেন হয়েছিল ইত্যাদির যদি অনেস্টলি কারণ দর্শানো থাকে তাহলে আপনি নিজেই বুঝে যাবেন আপনার কি রা উচিত!

মোটকথা, একজন ভালো সিইও বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর সবসময় কোম্পানির অবস্থা অনেস্টলি শেয়ার করবেন এবং যদি খারাপ পরিস্থিতি হয়ে থাকে তাহলে সেটা নিয়ে আলোচনা করবেন। পাশাপাশি কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যায় তা নিয়েও!

আবার, এমন কোম্পানির শেয়ার কেনাই ভালো যে কোম্পানির ম্যানেজিংয়ে যারা আছেন তাদের অনেক বড় একটা স্টেক আছে ওই কোম্পানিতে। যেমন, কোনো সিইও যদি কোম্পানির ৫% বা ১০% ওউন করে তাহলে সে কোনোভাবেই চাইবে না তার কোম্পানিটি ডুবে যাক।

আবার ধরুন আপনি একটা কোম্পানির শেয়ার কিনতে গেলেন। দেখলেন তার সবই ঠিক আছে।  কিন্তু, ওই কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টররা তাদের সব শেয়ার গুলো শুধু বেচে দিচ্ছে।  একটা দুইটা না, সবই বিক্রি করে দিচ্ছে।  এক্ষেত্রেও খোঁজ খবর নেয়া উচিত। দেখা যাবে কোনো একটা সমস্যার কারণে হয়ত তারা একই সাথে সব শেয়ার বেচে দিচ্ছে।  সেই সমস্যা বা কারণটা খুঁজে বের করা উচিত।

যারা ভ্যালু ইনভেস্ট করেন তারা শেয়ার তখনই কেনেন যখন তার দামটা অনেক কম থাকে। আবার তখনই বিক্রি করেন যখন দামটা বেড়ে যায়। এভাবে Buy low, sell high রুলস মানতে হলে শেয়ারের দাম বাড়ে বা কমে কেন সেটা আপনাকে জানতে হবে।

এজন্য আপনাকে মার্কেট অর্থাৎ যেখানে শেয়ার কেনা-বেচা হয় সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে হবে। হতে পারে যেকোনো মার্কেট যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জ হয়।

এই মার্কেট একেকটা কোম্পানির শেয়ার এমন দামই রাখে যেটা হওয়া উচিত।

এই মার্কেটের মুড সুইং হয় বলা যায়। যখন খুব ডিপ্রেসড থাকে তখন দাম কমায়ে নাই করে ফেলে এবং যখন একটু ভালো বোধ করে তখনই তড়তড় করে দাম বাড়িয়ে ফেলে।

এক্ষেত্রে আপনার উচিত যখন মার্কেট ডিপ্রেশনে থাকবে অর্থাৎ দাম কম থাকবে তখনই শেয়ার কেনা।

এই দাম বেশি কমের বিষয়টা বুঝতে হলে আপনাকে জানতে হবে শেয়ারের এক্সাক্ট রেট কত, দামটা কত। যদি এক্সাক্ট দাম দশ টাকা হয় তাহলে বুঝবেন কখন কমছে আর কখন বাড়ছে। দশ টাকার শেয়ার পনেরো টাকা হলে নয়, যখন কমে পাঁচ টাকা হয়— তখনই কেনা উচিত।

আবার যখন বেচবেন তখন কিন্তু দশ টাকার চে’ অনেক বাড়বে যখন— তখনই।

শেয়ারের এক্সাক্ট ভ্যালুটা জানার জন্য অনেক ওয়ে আছে।

4. Margin of Safety

এভাবে আসল ভ্যালুটা জানার পরে একটা মার্জিন অব সেফটি নিয়ে আসতে হবে যেটা এটলিস্ট ৫০%।  মানে ওই শেয়ারের ভ্যালুটা যখন অর্ধেক দামে আসবে তখনই কিনবেন। আবার যখন অর্ধেক বাড়বে দাম, তখনই বেচবেন।  অর্থাৎ,

 ” Buy low, sell high! “

এই হলো 4M থিওরি। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে Phill Town এর লেখা ” Rule 1- Simple Investment strategy ” বইটি পড়ে ফেলতে পারেন অথবা ভিজিট করতে পারেন তার ইউটিউব চ্যানেলটিও।

মজার বিষয় হচ্ছে, Phill Town এ বিষয়ে যে একটা বই লিখে ফেলল, সে এসব সম্পর্কে জানল কার কাছ থেকে? 

— Warren Buffett এর থেকে। Warren Buffett শিখেছেন Benjamin Graham থেকে। এই এমন জ্ঞানী গুণীজনের শক্ত শক্ত শিক্ষাই Phill Town তার বইতে সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ঠিক এজন্যই উচিত আপনারও তার বইটি একবার পড়ে দেখা!

Find out more about Investing by exploring this related topic. আপনার টাকা ম্যানেজ করার জন্য ৭ টি ফান্ড 

মোটকথা, শেয়ার কেনা-বেচা করবেন খুব সাবধানে, দেখেশুনে!

Similar Posts