স্টক মার্কেটে ইনভেস্টমেন্ট কীভাবে শুরু করবেন?
বিদ্রঃ আমি কোনো ফাইনান্সিয়াল এক্সপার্ট বা ইনভেস্টিং এর উপর এক্সপার্ট না। আমি শুধু আমার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করছি আপনাদের সাথে। আমার এই পোস্ট, ভিডিও থেকে আপনি ইন্টারটেইন্ড হতে পারেন এবং কিছু চাইলে শিখতে পারেন। তবে আমি কখনোই বলছিনা আমার কথা শুনে স্পেসিফিক কিছুতে বা কোনো স্টকে ইনভেস্ট করতে। টাকা আপনার, নিজে যাচাই-বাছাই করে ইনভেস্ট করবেন। আপনার কোনো ধরনের আর্থিক সমস্যায় Writers Motion দায়ী থাকবেনা।
“If you don’t find a way to make money while you sleep, then you will work until you die.”
–Warren Buffet
Wealth ক্রিয়েট করার জন্য সবচে’ বেশি যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে — ইনভেস্টমেন্ট। অথচ, এত প্রয়োজনীয় একটা সেক্টর বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে ইনভেস্টমেন্ট করার রাইট প্লেস তো নেই-ই, যদি হালাল ইনভেস্টমেন্টের কথা বলেন – তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কেউ কোনোদিন দেখেছে কি-না সন্দেহ!
কিন্তু! ইনভেস্ট তো করতে হবে। কোথায় করবো?
এজন্য তূলনামূলক ভালো একটা অপশন হতে পারে ” স্টক মার্কেটে ইনভেস্টমেন্ট! “
ইনভেস্ট করার জায়গা না-হয় পেলেন। কিন্তু, করবেন কিভাবে?
এজন্য কিছু জিনিসের ওপর ফোকাস করতে হবে। ধরুন, আপনি জাপান গেলেন। জাপান গিয়ে যদি বাংলায় কেনাবেচা করতে চান তাহলে আপনিও যেমন লসে পড়বেন, ক্রেতারাও তেমনই! এক্ষেত্রে আপনাকে আয়ত্ত করতে হবে ভাষাগত দক্ষতা। ইনভেস্টমেন্টের দুনিয়ায়ও এমনই।
একটা ইনভেস্টমেন্ট সেক্টরে নানা ভাবের এবং নানা ভঙ্গিমার বিশেষ কিছু টার্ম থাকে। আপনি যদি সেগুলো সম্পর্কে না জানেন তাহলে সরি টু সে- এসব আপনার করা উচিত হবে না।
তাহলে এসব কিভাবে শেখা যাবে?
আজকাল সবকিছুই আমাদের হাতের মুঠো’য়। আস্ত একটা দুনিয়া যেন পকেটে ভরে গেল টুক করে!
সিরি আন্টি অথবা গুগল মামার ব্রেইন থেকে তথ্য নিচ্ছি সেকেন্ডের ভেতর। এভাবে গুগল অথবা ইউটিউবের সাহায্য নিতে পারেন স্টক মার্কেটে ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কে জানতে। স্টক মার্কেট নিয়ে অনলাইনে পড়াশোনা, জানাশোনা করলেই হবে। এক্ষেত্রে ইউটিউবে কিছু চ্যানেল আছে।
যেমন- ” CA Rachana Phadke Ranade ” এই চ্যানেলে স্টক মার্কেট নিয়ে বহু তথ্য দেয়া আছে। ইভেন একটা প্লেলিস্টই আছে এটার ওপর।
আবার, যদি বাংলাদেশী ইউটিউব চ্যানেলের নাম জানতে চান, তাহলে আছে- Stock analysis with Kabir।
এভাবে বিভিন্ন চ্যানেলে খোঁজ নিয়ে স্টক মার্কেট সম্পর্কে ধারণা ক্লিয়ার করে নিতে পারেন। এছাড়াও এ সম্পর্কে চাইলে কোর্সও করতে পারেন।
এরপর ইনভেস্টমেন্ট করবো কোথায়?
কোথাও ইনভেস্ট করা বা শেয়ার কেনা কিন্তু আম-কাঁঠাল কেনার মত না। যে, আপনার কাছে টাকা আছে আর বাজারে গিয়ে কিনে ফেললেন। এজন্য আপনাকে বিশ্বাসযোগ্য সোর্স খুঁজতে হবে।
আসলে শেয়ার কেনা-বেচা করাটা আপনি সরাসরি করতে পারবেন না। একটা মাধ্যমের সাহায্য নিতে হবে। যেমন- আপনি যেকোনো একটা সিম কোম্পানির শেয়ার কিনতে চাইলেন। এমন একটা সোর্সের সাথে যোগাযোগ করতে হবে যাদেরকে আপনি টাকা দেবেন এবং তারা আপনাকে ওই কোম্পানির শেয়ার কিনে দেবে।
অথবা যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে চান তাহলে একই ভাবে তারা বিক্রি করে আপনাকে টাকা এনে দেবে। এইযে, শেয়ার কেনা-বেচা করার জন্য আপনাকে যারা হেল্প করলো তাদেরকে বলা হয় ব্রোকারেজ হাউজ।
ব্রোকারেজ হাউজ হলো, এমন কিছু আলাদা আলাদা ছোট ছোট কোম্পানি যারা এভাবে শেয়ার কেনা-বেচার সার্ভিস দিয়ে থাকে।
মোটকথা, আপনাকে শেয়ার কিনতে হলে বা বেচতে হলে এদের সাহায্য নিতে হবে। কিন্তু, ব্রোকারেজ হাউজ সিলেক্ট করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল করে সিলেক্ট করা ভালো। যেমন-
- আপনার শেয়ার বেচে দিয়ে অথবা আপনাকে শেয়ার কিনে দিয়ে তাদের কী লাভ? তারা কত পার্সেন্ট ফী রাখছে ইত্যাদি।
- যদি আপনি অফলাইন সার্ভিস নিতে না চান বা না পারেন তাহলে তারা অনলাইন সার্ভিস দিতে পারবে কি-না ইত্যাদি।
ব্রোকারেজ হাউজের কাছে গিয়ে বললেই কী তারা কাজ করে দেবে?
না। ওদের কাছে গিয়ে আপনার একটা একাউন্ট খোলা লাগবে। যাকে বলে— BO Account বা Beneficial Owner Account ।
BO account হচ্ছে অনেকটা আমাদের নরমাল ব্যাংক একাউন্টের মতই। যেভাবে আমরা আমাদের ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা রাখতে পারি, BO Account এ-ও সেভাবেই টাকা জমা থাকবে।
কিন্তু, আপনি সেই টাকা দিয়ে শুধুমাত্র শেয়ারই কেনা-বেচা করতে পারবেন, অন্য কিছু না!
BO Account খোলার জন্য কী লাগে?
নরমাল ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য বেসিক যেসব ইনফরমেশন দরকার (যেমন, NID কার্ড, নমিনির ইনফরমেশন ইত্যাদি) এখানেও তা-ই প্রয়োজন। এসবকিছুর সাথে একটা নরমাল ব্যাংক একাউন্টও থাকা লাগবে। যেকোনো ব্যাংকের একটা একাউন্ট হলেই চলবে।
BO Account এর সাথে নরমাল ব্যাংক একাউন্ট কেন প্রয়োজন?
আপনি আপনার BO Account থেকে আপনার প্রয়োজনে শেয়ার কেনা-বেচা করা ছাড়া অন্য কোথাও খরচ করতে পারবেন না। যদি আপনার একান্তই টাকার প্রয়োজন হয় তাহলে যে ব্রোকারেজ হাউজ এর সাথে কাজ করছেন তাদেরকে বললে তারা আপনার BO Account থেকে আপনার অন্য নরমাল ব্যাংক একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দেবে।
একটা কোম্পানি এক বছরে সম্পূর্ণ খরচ-টরচ বাদ দিয়ে টোটাল একশো টাকা প্রফিট করলো। এরপর তারা চাইলো এখান থেকে সত্তর টাকা তাদের সমস্ত শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দেবে৷ এইযে, কোম্পানির একটা অংশ সব শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে – এটাকে বলে ডিভিডেন্ড দেয়া।
সব কোম্পানি কিন্তু ডিভিডেন্ড দেয় না। কিছু কিছু কোম্পানি দেয়। আবার, এই ডিভিডেন্ডের মধ্যেও ভাগ আছে। যেমন, ক্যাশ ডিভিডেন্ড, স্টক ডিভিডেন্ড ইত্যাদি।
তো, যখন একটা কোম্পানি আপনাকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেবে তখন ওই টাকাটা আপনার নরমাল ব্যাংক একাউন্টে যাবে। এজন্য প্রতিটা BO Account এর সাথে একটা করে নরমাল ব্যাংক একাউন্ট এটাচ্ড থাকে।
এরপর শেয়ার কেনা-বেচা করব কীভাবে?
আগে হত কী, মানুষজন শেয়ার কিনতে হলে ফিজিক্যালি কিনতে যেতো। স্টক এক্সচেঞ্জে গিয়ে কোন কোম্পানির শেয়ারের রেট কত এসব দেখে শেয়ার কিনতো। কিন্তু, এখন তো ডিজিটাল যুগ- আধুনিক সব। এখন আমাদের হাতে অনেক অপশন।
চাইলেই যেকোনো ব্রোকারেজ হাউজ সিলেক্ট করে তাদের সাথে ফোনকলে, ই-মেইলে অথবা মেসেঞ্জারের মাধ্যমেও এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারবেন এবং শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে, প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজ তাদের ক্লায়েন্টদেরকে একটা করে কোড দেয়। সেই কোডটা তাদেরকে দিতে হবে। এরপর আপনি তাদের মাধ্যমে কেনা-বেচা করতে পারবেন!
আরেকটা পন্থা হলো, DSE ( Dhaka Stock Exchange ) Mobile App ব্যবহার করা। কিন্তু, যদি ভালো সার্ভিস চেয়ে থাকেন তাহলে এটা ব্যবহার না করাই ভালো।
সুতরাং, এই হলো শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করার আগে জানা দরকার এমন বেসিক কিছু ইনফরমেশন। প্রথমত, শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট নিয়ে পড়াশোনা করুন। একটা ভালো ব্রোকার হাউস নির্বাচন করুন। BO Account খুলুন। BO Account এ টাকা ডিপোজিট করুন। এরপর ইচ্ছেমত শেয়ার কেনা-বেচা করুন!