বাংলাদেশের বাংলা ওয়েবসাইট গুলোতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায় কি-না?

মাতৃভাষা ব্যবহার করে ইনকাম করার সুযোগ পেলে সবাই একটু স্বস্তি বোধ করেন। আবার, বিভিন্ন কারণেই অনেকের ইন্টারন্যাশনাল সাইটে কাজ করতে অসুবিধা হয়। তাদের সবারই প্রশ্ন থাকে, বাংলাদেশে বাংলা ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায় কি-না?

— অবশ্যই যায় এবং এর কিছু সুযোগ সুবিধাও আছে। যেমন,

  • আপনাকে ইংরেজিতে কনটেন্ট লেখার ঝামেলা মাথায় নিতে হবে না। যদি আপনার ইংরেজি ভাষা দক্ষতা ভালো না হয়, তাহলে একটা ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট প্লেসে কনটেন্ট লিখে আয় করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু বাংলাদেশী সাইটের ক্ষেত্রে বাংলায় কনটেন্ট লিখে এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
  • ভবিষ্যতে বাংলা ব্লগ গুলোর ট্রাফিকের পরিমাণ, এর গ্রহণযোগ্যতা গুগলের কাছে অনেক বেড়ে যাবে। যার একটা ভালো বাংলা ব্লগ আছে, যেখানে ট্রাফিকের পরিমাণ ভালো — তার আর্নিং করার সুবিধাটা বেড়ে যাবে।
  • ইন্টারন্যাশনাল সাইটে ইনকাম করে সেটা পকেটে ঢোকানোর জন্য কিছু কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা লাগে ইত্যাদি ইত্যাদি৷ যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই অথবা আঠারো বছর বয়স হয়নি— তাদের জন্য বাংলা সাইটে কাজ করা সুবিধাজনক। চাইলে ইনকামের টাকাটা দেশীয় কোনো মাধ্যম- বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমেও নিতে পারেন।

বাংলা সাইটে কাজ করার সুবিধার পাশাপাশি বাংলা ব্লগ লেখার অসুবিধাও আছে৷ যেমন,

  • ইন্টারন্যাশনাল সাইটের তুলনায় ইনকাম কম হবে। কারণ, আপনি যখন একটা ইন্টারন্যাশনাল সাইটের জন্য ব্লগ লিখতেন তখন ইনকামটা ডলারে হতো। সে কারণে ইনকামটা আপনার আশানুরূপ না-ও হতে পারে।

Want to learn more about Blogging? This post could provide more insights. ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যা প্রতিটি ব্লগারের ফলো করা উচিত! 

বাংলাদেশের কিছু ই-কমার্স সাইট, কোর সাইট— যেগুলোর অ্যাফিলিয়েট মডেল রয়েছেঃ

1.ঝাক্কাস ডটকমঃ

ইলেক্ট্রনিকস, হেলথ্, বিউটি ইত্যাদি জাতীয় প্রোডাক্ট এদের রয়েছে। ঝাক্কাস ডটকম ৯% কমিশন দিয়ে থাকে। তাদের কুকিং পিরিয়ড হচ্ছে ত্রিশ দিন এবং তারা আপনাকে সাপ্তাহিক পেমেন্ট করবে। পেমেন্টটা হতে পারে বিকাশ অথবা ব্যাংক ট্র্যান্সফারে।

(কুকিং পিরিয়ডটা কী?

  ধরুন, কেউ আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করলো আজকে। আজ থেকে ত্রিশ দিন পর্যন্ত, বা একটা সাইটের যতদিন কুকিং পিরিয়ড থাকে ততদিন পর্যন্ত এই ডাটাটা সাইটে থাকবে যে আপনার লিংকে ক্লিক করে কেউ সাইটে প্রবেশ করেছিলো। এই পিরিয়ডের মধ্যে যদি ক্লিক করা ব্যক্তি ওই প্রডাক্টটা কেনে তাহলে আপনি ওটার কমিশনটা পাবেন।

কিন্তু, যদি এমন হয়— আপনার লিংকে ক্লিক করার পর যে সাইটে প্রবেশ করেছিলো, একই সাইটে অন্য কারো লিংক থেকে প্রবেশ করে এবং তারপর প্রডাক্ট কেনে তাহলে কমিশনটা আপনি না, যার লিংকে ক্লিক করে কিনেছে সে পাবে।)

2.বিডিশপঃ

এদেরও গ্যাজেট, ইলেক্ট্রনিকস জাতীয় প্রোডাক্ট রয়েছে। এরা আপনাকে ৩% – ৭% পর্যন্ত কমিশন দেবে। এটা নির্ভর করবে আপনি কোন লেভেলে আছেন। কারণ, তাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের কিছু লেভেল আছে। আপনার লেভেল যত বাড়বে, কমিশনও তত বাড়বে! এদেরও কুকিং পিরিয়ড ত্রিশ দিন এবং আপনাকে উইকলি পেমেন্ট করা হবে বিকাশ অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

3.দারাজঃ

দারাজকে বলা যায়, বাংলাদেশের অ্যামাজন। যার কথা কমবেশি আমরা সবাই ই জানি। দারাজ মূলত ১২% পর্যন্ত কমিশন দেয়। এক্সাক্ট ১২% ই না, হতে পারে ১% থেকে ১২% এর মধ্যে আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী ওই পার্সেন্টেজের কমিশন পাবেন।

4.বহুব্রীহিঃ

বহুব্রীহি হচ্ছে একটা অনলাইন কোর্স প্ল্যাটফর্ম। এখানে অনেক ধরনের কোর্স রয়েছে। বহুব্রীহি ২০% কমিশন দিয়ে থাকে। তাদের যে কোর্সটাই আপনি প্রোমোট করেন না কেন, যদি আপনার প্রোমট করা লিংক থেকে ওই কোর্সটা কেউ কেনে তাহলে ওটার ২০% পর্যন্ত কমিশন আপনাকে দেবে৷ তাদের কুকিং পিরিয়ডও ত্রিশ দিন। পেমেন্ট সিস্টেম হলো, প্রতি পনেরো দিন পরপর আপনাকে পে করবে বিকাশ অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

5.শপসঃ

এটা হলো একটা জেনারেল স্টোর। ওরা ১০% এর মত কমিশন দেয়।

6.ফুডপান্ডাঃ

ফুডপান্ডার সাথেও আমরা সবাই ই পরিচিত। এরা অনলাইন ফুড সার্ভিস দিয়ে থাকে। ফুডপান্ডা সাধারণত ৫% কমিশন দিয়ে থাকে। এদের কুকিং পিরিয়ডটা একটু কম— সাতদিন।

7.ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডঃ

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই ইলেকট্রনিকস প্রোডাক্টে ভরপুর এই সাইটটি। বাড়িতে প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক প্রোডাক্ট- যেমন, ওভেন, টোস্টার ইত্যাদিও পাবেন। তারা আপনাকে ৫% কমিশন দেবে।

8.ইলেক্ট্রনিকস বিডিঃ

এই সাইটটা মূলত ইলেক্ট্রিক্যাল স্টুডেন্ট বা ইলেক্ট্রিক্যাল কম্পোনেন্টদের জন্য। বিভিন্ন ধরনের সার্কিট, সার্কির বিল্ডার, রোবট বানাতে চাইলে- রোবট বিল্ডার, সার্কিটের কম্পোনেন্ট ইত্যাদি পাওয়া যায়। বিশেষ করে আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্টুডেন্ট হোন (ট্রিপল ই, সিএসই ইত্যাদির) তাহলে আপনি অবশ্যই জানবেন আপনাদের কোন প্রজেক্টে কোন প্রোডাক্ট প্রয়োজন। এভাবেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। তারা আপনাকে ৫% কমিশন দেবে। 

9. Content Spartan.Com:

এই ওয়েবসাইটটি মূলত “মুনতাসীর রহমান” এর কোর্স রিলেটেড একটি সাইট। এখানে কনটেন্ট রাইটিংয়ের ওপর কোর্স পেয়ে যাবেন এখানে। কন্টেন্ট স্পার্টান ডটকম মূলত তাদের কোর্সের ওপর সবচে’ বেশি কমিশন- অর্থাৎ, ২৫% কমিশন দিয়ে থাকে৷ ২৫% কমিশন হলে প্রায়ই ৫১২ টাকার মত হয়। এটি নিশ্চয়ই হতাশাজনক কোনো এমাউন্ট নয়!

পেমেন্ট সাধারণত মান্থলি করা হয় বিকাশ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা যে পদ্ধতিতে আপনি চান৷

কন্টেন্ট স্পার্টান ডটকমের অ্যাফিলিয়েট হতে হলে কি করতে হবে?

  • প্রথমে আপনি Content Spartan.com ওয়েবসাইটে যাবেন।
  • একদম নিচে স্ক্রল করে, Become an affiliate নামের একটা পেইজ পাবেন৷ সেখানে ক্লিক করুন। 
  • Affiliate Dashboard চলে আসবে৷ এখানে সাইন ইন করুন। ই-মেইল অ্যাড্রেস, পেমেন্ট ই-মেইল অ্যাড্রেস, নাম-ধাম, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি দিয়ে। এক্ষেত্রে, আপনার মেইন ই-মেইল এবং পেমেন্ট ই-মেইল অ্যাড্রেস এক হলেও অসুবিধা নেই। প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে রেজিস্ট্রার করুন।
  • আপনাকে এপ্রুভ করা হলে আপনি একটি ই-মেইল পেয়ে যাবেন।
  • এরপর সরাসরি লগিন করুন। লগইন করলে আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট ড্যাশবোর্ডে চলে যাবেন।
  • অ্যাফিলিয়েট ড্যাশবোর্ডে সব ধরনের ইনফরমেশন জানতে পারবেন। যেমন, আপনার অ্যাফিলিয়েট রেট কতটুকু, এখন পর্যন্ত কত আর্নিং করেছেন, আপনাকে কত পে করা হয়েছে, আপনার ব্যালেন্স, কনভারসন রেট ইত্যাদি। এছাড়াও, রিসেন্ট কমিশন বা রিসেন্ট কয়টা ক্লিক আসছে সবই জানতে পারবেন।

এরপরে, প্রোমট করার জন্য —

  • অ্যাফিলিয়েট ড্যাশবোর্ডের নিচে জেনারেট লিংকে ক্লিক করুন।
  • এরপর একটা রেফারেল URL পেয়ে যাবেন। সেটা কপি করে পেস্ট করার পর, আপনার URL এর শেষে ডটকমের পরে একটা লেটার কোড টাইপ নাম  চলে আসবে। এটাই আপনার অ্যাফিলিয়েট আইডি। যেটা আপনার URL এর সাথে জয়েন্ট হয়ে যাবে।
  • সাইটের যেই পেইজটা প্রোমট করতে চান, সেখানে যান। পেইজের লিংক কপি করুন। জেনারেট লিংকে গিয়ে Page URL এ লিংকটি পেস্ট করুন। জেনারেট অপশনে ক্লিক করুন। আপনার জন্য অটোমেটিক একটা লিংক জেনারেট হয়ে যাবে। লিংকটি কপি করে দেখলে দেখবেন যে, আপনার অ্যাফিলিয়েট আইডি চলে আসবে।
  • লিংক জেনারেট করার পর, আপনার সোশ্যাল সাইট— ফেসবুক, ইউটিউব, ওয়েবসাইট ইত্যাদি যেখানে ভালো অডিয়েন্স আছে সেসব স্থানে লিংকটা শেয়ার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।

যদি কোর্সের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার আগে কোর্সটা আপনি নিজেই করতে চান তাহলে করে ফেলুন এখনই!

বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশে বাংলা সাইটে কাজ করার সুযোগও কিন্তু কম নয়।

তাই, ইন্টারন্যাশনাল সাইটে কাজ করায় বিপত্তি বা বাঁধা থাকলে ভয় না পেয়ে বাংলা সাইট থেকেই শুরু করুন আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং! 

Similar Posts