কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতে হলে যে তিনটি জিনিস জানতেই হবে! 

লেখালেখির শখটা কমবেশি সবার মধ্যেই আছে। কেউ বই পর্যন্ত লিখে ফেলেন অথবা কেউ শুধুমাত্র ডায়েরি লেখা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকেন। এরমধ্যে এক ধরনের লেখক শ্রেণী হচ্ছেন— কন্টেন্ট রাইটার’রা। 

আপনি যদি কন্টেন্ট রাইটার হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার লেখা কন্টেন্ট আপনি ডায়েরিতে জমিয়ে রাখতে চাইবেন না। সবসময়ই চাইবেন, একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম— যেমন, fiverr, upwork ইত্যাদি জায়গায় যাতে আপনি কাজ পান। 

কিন্তু, কাজ পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা?  মোটেই না। এজন্য প্রয়োজন ধৈর্য্য, সময় এবং পরিশ্রম। এগুলোর পাশাপাশি এখানে রইলো কিছু টিপস এবং তথ্য— যেগুলো জানলে বা ফলো করলে আশা করা যায় আপনার কাজ পেতে একটু হলেও সহজ হতে পারে। 

একটু ভেতরে যাওয়ার আগে জেনে নিতে হবে কিছু বিষয়—

কন্টেন্ট রাইটারদের কাজ পেতে কেন দেরি হয়? 

অনেক ক্লায়েন্টই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে রাইটার খুঁজে থাকেন। সেখানে হাজার হাজার কমেন্টও আসে বটে! 

কিন্তু, তারমধ্যে দেখা যায় কাওকেই ক্লায়েন্ট পছন্দ করেন না। এর কারণ কী?

অনেকে ভালো লেখেন, কিন্তু কাজ পান না। এর-ই বা কারণ কী?  আর কাজ পাবার দ্রুত উপায়-ই বা কী? 

দ্রুত কাজ পেতে হলে ফলো করতে হবে কিছু টিপস,  বাদ দিতে হবে কিছু ভুল। যেমন— 

Find out more about Content Writing by exploring this related topic. এই ৫টি উপায়ে আপনি আরো দ্রুত লিখতে পারবেন!

1.ক্লায়েন্টের পোস্ট ভালো করে পড়া:

অনেক সময়ই যেসব রাইটাররা ক্লায়েন্টের পোস্টে কমেন্ট করে থাকেন তারা ক্লায়েন্টের পোস্টটা ভালো ভাবে না পড়েই, তার দেয়া ইন্সট্রাকশন ফলো না করেই ধুম করে কমেন্ট করে বসেন। ক্লায়েন্টকে টেক্সট করে বসেন। কিন্তু, কোনো রেসপন্স পাননা। লাগাতার টেক্সট করার পরেও রেসপন্স না পেয়ে ক্লায়েন্ট ভাইকেই ফেইক ভেবে বসেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সত্যিই কি ক্লায়েন্টই ফেইক?

উত্তর হচ্ছে – না। ফেইক না হওয়া সত্বেও টেক্সটের রিপ্লাই না দেয়ার কারণ আছে। 

কেউ যখন একটা জব পোস্ট করে, সে অবশ্যই তার পোস্টে একটা ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেয় যে- আপনার কিভাবে অ্যাপ্লাই করতে হবে। হয়ত আপনাকে তার মেইল দিয়ে দেবে, আপনাকে কাজের ডেমো পাঠাতে বলবে ইত্যাদি।  

কিন্তু, এমন ইন্সট্রাকশন দেয়ার পরেও যদি জবপোস্টের নিচে লাগাতার কমেন্ট করতে থাকেন যে- interested, আমি রাজী, আমি কাজটা করতে চাই ইত্যাদি তাহলে তো ব্যাপারটা ভালো হলো না। 

আপনি ইন্টারেস্টেড কি-না তা কিন্তু ক্লায়েন্ট জানতে চায়নি। সে আপনার কাজ দেখতে চেয়েছে। আপনার অ্যাপ্লিকেশন দেখতে চেয়েছে— কমেন্ট না। সুতরাং, ক্লায়েন্টের দেয়া ইন্সট্রাকশন ফলো করে জব অ্যাপ্লাই করুন। 

আপনি যদি তার জবপোস্টে উল্লেখিত ইন্সট্রাকশনই ফলো না করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই ক্লায়েন্ট ধরে নেবে যে আপনি তার দেয়া কাজ গুলোও ঠিক ভাবে করতে পারবেন না। 

এছাড়াও আপনি যখন fiverr, freelancer বা upwork এর মত কোনো প্ল্যাটফর্মে যাবেন- তখন অনেক জব পোস্ট দেখবেন যেখানে পোস্টের মধ্যে অনেক ইনফো জানতে চায়৷ যেমন- আয়ারল্যান্ডের রাজধানীর নাম কি? অথবা ১০ × ২৩ = কত? ইত্যাদি।  

এরকম কোন ইনফরমেশন জানতে চাওয়ার কারণ হচ্ছে- যাতে সে এনশিওর করতে পারে যে, আপনি পুরো জব পোস্টে পড়েছেন এবং আপনি কোন রেডিমেড টেমপ্লেট এপ্লাই করেননি। 

সুতরাং, ব্যাপারগুলো আপনাকে অবশ্যই মেইনটেইন করতে হবে এই ব্যাপার গুলো এবং এই উত্তরগুলো না দিলে ক্লায়েন্ট সাথে সাথেই বুঝে যাবে যে- আপনি তার জব পোস্টটি ভালোভাবে পড়েননি।

আবার- অনেকে কমেন্ট বা ইনবক্স করার পরিবর্তে মেইল করেন ঠিকই; কিন্তু মেইলের ভেতরে যদি কোন প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয় বা ১০০ ওয়ার্ডের কোন কাজের ডেমো চাওয়া হয়— সে ওটা খেয়ালই করেন।

এজন্য প্রশ্নের উত্তর বা কাজের ডেমো না দিয়েই নিজের সম্পর্কে অনেক অযথা কথাবার্তা বলেন। যেমন- আমি এত বছর ধরে কন্টেন্ট রাইটিং এর সাথে যুক্ত আছি, আমি এই কাজ করি, আমি ইংলিশ কনটেন্ট রাইটার, আমি বাংলা কন্টেন্ট রাইটার, ইত্যাদি।

কথা হলো এগুলো কেউ জানতে চায়নি। আপনাকে পোস্টে যে সব ইনস্ট্রাকশন দেয়া হয়েছে, আপনি শুধু সেগুলোই ফলো করবেন। 

কিন্তু, কথা হচ্ছে প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরেই কিছু না কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। আপনার ভেতরে যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে সেটা কিভাবে করবেন? 

প্রশ্ন করার জন্য মূলত; প্রথমে আপনাকে যে ইনস্ট্রাকশন দেয়া হয়েছে— অর্থাৎ আপনার কাছে যদি কোন একশো ওয়ার্ডের ডেমো চেয়ে থাকে বা কোন প্রশ্নের উত্তর চেয়ে থাকে, তাহলে আপনি আপনার ইমেইলে সর্বপ্রথম সেই উত্তরটাকেই উল্লেখ করবেন। 

এরপরে আপনি নিজের সম্পর্কে দুয়েকটা কথা লিখতে পারেন। অবশ্যই নিজের ইতিহাস বলতে যাবেন না। সিভিও দেয়ার প্রয়োজন নেই। এগুলো দেয়ার পরে যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, সেটা দেবেন। 

2.রেডিমেড টেমপ্লেট ব্যবহার না করা:

ক্লায়েন্ট যখন তার জব পোস্টে ১০০ ওয়ার্ডের কোনো নমুনা চায় তখন অনেকেই কোনো একটা রেডিমেড টেমপ্লেট ব্যবহার করে নমুনাটা পাঠিয়ে দেন। দেখা যায়, একই রেডিমেড টেমপ্লেট অনেকেই ব্যবহার করে।

এই রেডিমেট টেমপ্লেট ব্যবহারের কিছু অসুবিধা আছে। যেমন—

  • ক্লায়েন্ট যদি স্পেসিফিক কিছু জানতে চায়, তাহলে সেটার পরিপূর্ণ উত্তর আপনি দিতে পারছেন না। 
  • পপুলার যে টেমপ্লেটগুলো আছে, যেগুলো সবচেয়ে বেশি চলে সেই টেমপ্লেট গুলো ব্যবহারের কারণে Upwork বা fiverr এর মতো প্ল্যাটফর্ম গুলো আপনাকে আর্কাইভ করে রাখতে পারে। 
  • যারা নিয়মিত রাইটার হায়ার করে থাকেন বা কনটেন্ট রাইটিং সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রাখেন- তারা রেডিমেড টেমপ্লেট দেখলেই চিনতে পারেন। 

সুতরাং কোনভাবেই রেডিমেড টেমপ্লেট ব্যবহার করা যাবে না। ক্লায়েন্ট আপনার কাছে যেরকম চেয়েছে আপনার তেমনই দিতে হবে। 

3.পোর্টফলিও তৈরি করা: 

বর্তমানে হাজার হাজার কন্টেন্ট রাইটার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। কিন্তু, এর মধ্যেও দু’টো দল আছে। 

  1. প্রফেশনাল।
  2. বিগিনার। 

এই দুই দলের মধ্যে পার্থক্য করে দেয় যে বিষয়টা সেটা হচ্ছে- রাইটারের পোর্টফোলিও। যখন আপনি কাউকে বলবেন যে, আপনি একজন কন্টেন্ট রাইটার— তখন সে অবশ্যই জানতে চাইবে যে, আপনি কি কি আর্টিকেল লিখেছেন। 

তখন আপনি আপনার লিখিত আর্টিকেল সমূহ সাজিয়ে রাখা একটি ওয়েব এড্রেস দেবেন। এই ওয়েব এড্রেসই আপনার একটা পোর্টফোলিও।

আপনার পোর্টফোলিও তে আপনার লেখা বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল সাজানো থাকবে। যদি আপনি মানি আর্টিকেল লিখে থাকেন তাহলে মানি আর্টিকেল থাকবে, রিভিউ আর্টিকেল লিখলে রিভিউ আর্টিকেল থাকবে ইত্যাদি। 

অর্থাৎ, আপনার লেখা সবকিছু একটা ওয়েব এড্রেস এর মধ্যে সাজানো থাকলে সেটা যদি কেউ দেখে তাহলে সে বুঝতে পারবে যে আপনি একজন প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার। 

ক্লায়েন্টের কাছে মেইল করার ক্ষেত্রে অনেকেই করেন কি- ক্লায়েন্টের ইমেইলে ইনডিভিজুয়াল একটা Doc File পাঠিয়ে দেন।  ডক ফাইল পাঠানোটা খুব খারাপ কিছু না। 

কিন্তু এই যুগে এসে একটা পোর্টফোলিওর যে দাম, সেটা ডক ফাইল পূরণ করতে পারে না। বড় কথা হচ্ছে – একটা পোর্টফোলিও তৈরি করা তেমন কঠিন কিছুই না। 

মিডিয়াম ডটকমের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার একটা পোর্টফলিও ফ্রি তেই তৈরি করে নিতে পারবেন। 

কিভাবে পোর্টফোলিও বানাতে হয়- এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বা বিস্তারিত শিখতে Writers Motion কোর্সে জয়েন করে ফেলুন এখনই!

মিডিয়াম ডট কমে গিয়ে খুব সহজে ফ্রিতে পোর্টফোলিও বানানো গেলেও সাজেশন থাকবে — যদি আপনি এই প্লাটফর্মে প্রফেশনালি থাকতে চান, তাহলে নিজের নামে একটি ডোমেইন নেইম কিনে, একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে সেখানে পোর্টফলিটা বানাবেন। 

ধরুন, আপনার নাম মো: আলী হায়দার। এখন আপনি নিজের নামে ডোমেইন কিনে ওয়েবসাইট বানালেন। যেটা হলো- mdalihaydar. com।  

এখন কেউ যদি আপনার কাজ দেখতে চায় তাহলে ফটাফট আপনার ওয়েবসাইটের লিংকটা পাঠিয়ে দিলে ব্যাপারটা কতখানি প্রোফেশনাল দেখাবে, বুঝতে পারছেন? 

Discover more interesting content on Content Writing by reading this post. 2023 সালে যেভাবে গুগলে র‌্যাংকের জন্য Product Roundup আর্টিকেল লিখতে হবে!

এজন্য ফ্রি-তে পোর্টফলিও বানানোর চেয়ে একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে পোর্টফলিও বানানো খুবই কার্যকরী। 

পুরো ইমেইলের ফরমেটটা কেমন হওয়া উচিত?

ক্লায়েন্টকে মেইল করার সময় ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন— 

  • ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী কাজের নমুনা অথবা প্রশ্নের উত্তর শুরুতেই রাখুন।
  • নিজের সম্পর্কে অল্প কথায় কিছু তথ্য বর্ননা করুন।
  • জব পোস্টে অভিজ্ঞতার বছর নির্দিষ্ট থাকলে নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করুন।
  • জব সম্পর্কে প্রশ্ন করুন। 

আপনি যদি কাজটা সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে চান, যেমন— স্যালারি কত, কাজটা কেমন, কিভাবে করতে হবে ইত্যাদি তাহলে ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবে যে আপনি কাজটা সম্পর্কে আগ্রহী। 

এক কথায়, কাজ পাবার গতি বাড়িয়ে দিতে চাইলে- 

  • ক্লায়েন্টের জব পোস্ট ভালো করে পড়তে হবে। 
  • ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী ইমেইল করতে হবে।
  • রেডিমেড টেমপ্লেট ব্যবহার করা যাবে না। 
  • নিজের একটা প্রোফেশনাল পোর্টফলিও বানাতে হবে। 

কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে প্রোফেশনালি কাজ করতে চাইলে অথবা কাজ পাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে চাইলে ওপরের টিপস গুলো ফলো করুন। আশা করা যায়, আপনার কাজ না পাবার হার শিগগিরই কমে যাবে। 

Similar Posts