ব্লগিং করে ইনকাম করতে হলে জানতে হবে সাতটি জিনিস!

আপনি যদি লেখেন, আপনাকে কে টাকা দেবে? আপনার কীবোর্ড?  আপনার মনিটর? না-কি আপনার লেখা? 

অনেকেই এখন ব্লগিংয়ের পথে হাঁটছেন।  কিন্তু মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় হাজারো প্রশ্ন। এরমধ্যে কমন একটা কোশ্চেন হলো— ‘ ব্লগিং করে কী আসলেই টাকা পয়সা ইনকাম করা যায়?’ 

ব্লগিং করে কি নিজের খরচ চালানো সম্ভব?  এতও কী ইনকাম হয়? সবাই কী পারে? আমি কী পারবো? যদি সম্ভব হয়, তাহলে কীভাবে শুরু করবো?

— এমন নানাবিধ প্রশ্নাবলী মাথার মধ্যে জট পাকায়। ব্লগিংয়ের দুনিয়াটা একটু রহস্য ঘেরা। কেউ সত্যি বলে, কেউ মিথ্যে কচলায়।  বিভিন্ন কারণে অনেকেই ব্লগিংটাকে কোটিপতি হওয়ার সহজ পথ হিসেবে তুলে ধরে। 

যেন আজ শুরু করলে কালকেই টপকানো যাবে আম্বানিকেও। কিন্তু এত ঢাক পেটানোর কারণ কী? 

বিভিন্ন কারণ হতে পারে। নিজের কোর্স বা প্রোডাক্ট বেচার জন্য, নিজেকে জাহির করার জন্য।  এটা একটা মার্কেটিং পলিসি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথবা অনেকে না জেনেও বলে থাকেন। 

আবার অনেকে বলেন, ‘ব্লগিং দিয়ে কিসসু হয়না। এসব ভাঁওতাবাজি।’

এখন ন্যাড়া বেলতলায় গিয়ে মাথা ফাটিয়ে আসার পর বেলতলাকেই অভিশপ্ত বলবে— এটাই স্বাভাবিক। চলুন আসল কেচ্ছা জানা যাক!

ব্লগিং থেকে ইনকাম করা সম্ভব। অতিরঞ্জিতওনা, তবে বেশ ভালো পরিমাণই সম্ভব। ব্যক্তিগত শখ থেকে ফুল টাইম ইনকাম করার জন্যও ব্লগিং সেরা। 

বিভিন্ন সেক্টরে আপনি ব্লগিংয়ের পদচারণা দেখবেন। ফ্যাশন, ফু,  ট্রাভেল, আইটি— যেকোনো কিছু।  অনেক অনেক সেক্টর রয়েছে, গুণেও শেষ করা যাবেনা। কিন্তু, এসব কিছুতেই সফলতা একদিনে আসেনা। 

ব্লগিং থেকে ইনকাম করতে হলে আপনার দরকার হবে, অসীম ধৈর্য্য, নিজের ওপর বিশ্বাস। রাতারাতি টাকার পাহাড় হয়ে যাবে বলে যদি ধারণা করেন, তা হবে ভুল। তা-ও ইনকাম করা সম্ভব। 

1.আদৌ কী সম্ভব? 

ব্লগিং একটা ব্যবসার মত। শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। আজকে আপনি একটা পোস্ট লিখে শুরু করছেন, কালকে দু’টো লিখবেন। পরশু- দশটা। এভাবে নিয়মিত লিখতে হবে। 

দেখা যাবে, একসময় ইনকাম হতে শুরু করবে। প্রথমে কয়েক ডলার, এরপর কয়েকশো ডলার। ব্লগিংটা হয়ে যাবে আপনার একটা পার্ট টাইম চাকরির মত। বছরখানেক পরে পার্ট-টাইম কাজটা ফুল টাইমের জায়গা দখল করবে। 

ব্লগিংটাকে প্রোফেশন হিসেবে নেয়ার পর অনেকেই আর নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনা। এজেন্সি দাঁড় করিয়ে ফেলে, পুরো একটা টিম কাজ করে যেখানে। এভাবে শূন্য থেকে ব্লগিং শুরু করে, অনেক বড় পরিধিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। 

অনেকে ব্লগিংটাকে শখের পাখি হিসেবে ব্যবহার করেন। যখন ইচ্ছে তখন লেখেন। এতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু আপনি চাইলে ফুলটাইমার হিসেবেও ব্লগিং করতে পারবেন। এতে আপনার নিয়মিত হতে হবে। নিয়মিত হলে অবশ্যই এর ফলাফল পাবেন। 

2. একাধিক উপায়ে ব্লগ হতে আয় করুন:

বড় বড় ব্লগার যারা আছেন, তারা কেউই শুধু লেখা দিয়ে আয় করে এতদূর আসেননি। ফুল-টাইমার ব্লগার হলে ব্লগিংটাই একমাত্র আয়ের পথ হয়ে যায়। 

তখন এখান থেকেই পথ তৈরী করে নিতে হয়। আপনি চাইলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন, অ্যাড রান করতে পারেন, মেম্বারশিপ সেল, ই-বুক সেল, প্রোডাক্ট প্রমোশন, বইয়ের চুক্তি, রিভিউসহ অনেক ধরনের কাজ করতে পারেন। 

একটা ব্লগকে মনিটাইজ করতে পারেন অনেক উপায়ে।  একজন ব্লগারের তৈরী করা ম্যাপ থেকে কিছুটা ধারণা নিতেই পারেন—

3. নির্দিষ্ট কোনো সূত্র নেই!

অনলাইন আয়ের পথ যেমন বেড়েছে, বেড়েছে এ নিয়ে মার্কেটিং-ও! ‘দশটা কাজ করে লাখ টাকা আয় করুন, দু’টো কোর্স করেই শিখে ফেলুন সব খুঁটিনাটি’ — এমন চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন অনলাইনে দেখেনি এমন কম মানুষই আছে। যারা এসব বিজ্ঞাপন দেয়, গ্যারান্টি ট্যাগ লাগিয়েই দেয়। কিন্তু আসলেই কি এসব শতভাগ সাফল্যের পেছনে নির্দিষ্ট কোনো সূত্র থাকে?

না, কোনো নির্দিষ্ট কোনো সূত্র নেই। নির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই।  প্রত্যেকটা সফল ব্লগারের নিজস্ব গল্প আছে। সবার কাজেই ভিন্নতা আছে। কেউ একই পথে সফল হয়না। 

কিছু কিছু মিল থাকলেও প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্ব, কাজের ভিন্ন স্টাইল, সফলতার পেছনের গল্প আছে। এসব আলাদা আলাদা গল্প আবার আলাদা আলাদা ধরনের অডিয়েন্স পছন্দ করে।

আপনিও যদি ভালো কিছু করতে চান, আশপাশের এমন সফল ব্লগারদের খুঁজে বের করে তাদের থেকে ভালোটা গ্রহণ করুন। টুকে নিন, কোনটা আপনার জন্য হেল্পফুল। এসব মিলিয়ে নিজেই নিজের স্টাইল তৈরি করে ফেলুন!

4. Many Niches Monetize :

একটা ব্যাপার ধারণা করা হয় যে, যারা কেবল ব্লগিং থেকে টাকা-পয়সা ইনকাম করেন তারা শুধু ব্লগিং থেকে ইনকাম করার কথাই বলে থাকেন। ব্যাপারটা পুরোপুরি সত্যি না। 

যারা প্রকৃতার্থে ব্লগিং করেন, তারা সাধারণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্লগিং করেন। প্রোডাক্ট সেল করে আর প্রোমোশন করেই যে কাটিয়ে দেন— তা না। 

অনেক বড় বড় ব্লগাররা নিজেদের পছন্দের নিশ নিয়ে লিখে, ব্লগটাকে বিভিন্ন ভাবে মনিটাইজ করে তারপর ইনকাম করেন।  যা থেকে অন্যরা এমনিতেই উৎসাহ পায়। 

5. শুধু ব্লগিং থেকে ইনকাম করে কী জীবনধারণ করা সম্ভব!

ব্লগিং নিয়ে অনেক বেশি হাইপ থাকলেও, ব্লগিং দিয়ে ফুল টাইম ইনকাম করা ব্লগারদের সংখ্যা খুবই কম। যদিও বা অনেকে করে থাকেন, তাদের মধ্যে সবাই ই অনেক বছর ধরে ব্লগিং করতে করতে এখানে এসে একটা ইনকাম করার পর্যায়ে যাচ্ছেন। 

এটা সত্যি যে, আপনি ব্লগিং করে ইনকাম করতে পারবেন। কিন্তু কাল শুরু করে আজই পারবেন না। লেগে থাকতে হবে প্রায় বছরখানেক, বা তার-ও বেশি সময়। 

তা-ও যে সবাই ই সফল হয়, তা না। অর্ধেকেরও বেশি ব্লগার ঝড়ে যায়। কেউ কেউ পার্টটাইম চাকরির মত ইনকাম করতে পারেন। কেউ কেউ ফুলটাইম ইনকাম করে ফেলেন সর্বোচ্চ চেষ্টায়। 

আপনি চাইলে আপনিও পারবেন।  কিন্তু লেগে থাকতে হবে নিয়মিত। 

6. লক্ষ্য অবধি দূরত্ব কেবল সময়!

জরিপে জানা গেছে, নামকরা বেশি ইনকাম করা ব্লগারদের মধ্যে প্রায় সবাই ই ৪ বছরের ও বেশি সময় ধরে লেখার পরে একটা ভালো পরিমাণ টাকা ইমকাম করতে পারছেন। 

যারা কমবেশি ইনকাম করেন, তারাও ২/৩ বছর ধরে ইনকাম করছে। স্পষ্টই বোঝা যায়, ব্লগিং শুরু করেই আপনি ইনকাম করতে পারবেন না। আপনার সময় না আসা অবধি কাজ করে যেতে হবে। 

অনেকে বছরখানেক বা তার-ও বেশি সময় ইনকাম করা ছাড়াই লিখে যেতে থাকেন। যদিও সবসময় ডিসেন্ট এমাউন্ট পাবেন না। তা-ও কষ্ট করলে কেষ্ট মিলবেই— এই মাইন্ডসেট নিয়েই আপনাকে বছরের পর বছর কাজ করতে হবে, যদি আপনি ইনকাম করতেই চান!

7. কাজও করতে হবে প্রচুর!

সফলতার জন্য শুধু সময় নিলেই যে হবে, তা না। সময় গড়াতে থাকলো, কিন্তু আপনি কাজ করলেন না— তা হবেনা, তা হবেনা। কর্মঠ হতে হবে। বলা যায়, এটাই মূল শর্ত। 

অনেকে বলবেন, প্যাসিভ ইনকামের কথা। কিন্তু প্যাসিভ ইনকাম সবসময় কাজ করেনা। আসলে একটিভ ইনকামের কোনো বিকল্প নেই। 

ভালো ব্লগার হতে হলে চারটা কাজ মন দিয়ে করতে পারেন।  আশা করা যায়, এতে অনেকটাই লাভবান হবেন—

  • দুর্দান্ত ব্লগ তৈরি করা।
  • আপনার ব্লগের আসল অডিয়েন্স খুঁজে বের করা।
  • ব্লগের একটা কমিউনিটি বানিয়ে ফেলা। 
  • টাকা কামানো বা ব্লগ মনিটাইজ করা। 

আপনাকে লিখতে হবে পাঠকের জন্য।  পাঠক কি চায়, কি পড়তে চায় এগুলো বুঝে লিখতে হবে। এছাড়াও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আপনাকে শুরু করতে হবে। বসে বসে চিন্তা ভাবনা না করে শুরু করেই ফেলুন। কাজ চলবেই! 

মোটকথা—

ব্লগিং করে কমবেশি ইনকাম করা সম্ভব।  অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কতদিন ধরে কাজ করছেন, কিভাবে করছেন এর ওপর।  ইনকাম করতে হলে আগে আপনার পরিবেশ বুঝুন। পাঠককে বুঝুন। আপনার আগ্রহ খুঁজে বের করুন। তারপর সময় করে শুরু করেই ফেলুন। পারবেন আপনিও!

Similar Posts