ওয়েবসাইট থেকে মাসে $1000 আয়ের রোড ম্যাপ!

যারা ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করেন, তাদের অধিকাংশের মাথায় ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করার আগেই টাকা ক্রিয়েট করার চিন্তা মাথায় আসে। ” কিভাবে একটা ওয়েবসাইট খুলে একবেলা’র ভেতর হাজার ডলার ইনকাম করা যায় ” — এমন প্রশ্নে সার্চ বার থাকে ভরপুর।

জি, ওয়েবসাইট দিয়ে টাকা রোজগার করবেন অবশ্যই।  কিন্তু, এজন্য প্রয়োজন সময়, মনযোগ, ধৈর্য্য এবং একটা রোড ম্যাপ! 

তাহলে, কী কী ফলো করতে হবে সেই রোড ম্যাপে?

1.নিশ রিসার্চঃ

নিশ রিসার্চ এবং কীওয়ার্ড রিসার্চকে দুই ভাই বলা যায়।

এই দু’টো স্টেপই একটা আরেকটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।  নিশ রিসার্চটা আপনি কখনোই কনফার্ম করতে পারবেন না কীওয়ার্ড রিসার্চ ছাড়া। একটা নিশ তখনই ফাইনাল করতে পারবেন যখন আপনি কীওয়ার্ড রিসার্চ করে দেখবেন , আপনি যে নিশ সিলেক্ট করেছেন সেটার মধ্যে লো কম্পিটিশনের কীওয়ার্ড আছে অন্তত ত্রিশটা!

যেগুলো একদম লো কম্পিটিশনের। এগুলো একটা নতুন সাইটে দিলে র‌্যাঙ্ক করা সম্ভব। তাই, কীওয়ার্ড রিসার্চ না করে নিশ ফাইনাল করতে পারবেন না। নিশ নিয়ে যদি বিস্তারিত বলি—

নিশ রিসার্চ করার সময় কয়েকটা জিনিস একদম দেখা লাগবেই। যেমন,

  • নিশের প্রতি আগ্রহঃ

এটা আপনার সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত ব্যাপার হলেও, আপনার দেখতেই হবে, যে নিশ নিয়ে কাজ করবেন সেটা সম্পর্কে আপনি ভাবতে চান কি-না।  আপনি কাজ করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন কি-না। একদম ধ্যান-জ্ঞান হতে হবে এমন নয় বিষয়টা, কিন্তু দেখবেন এতটুকু আগ্রহ যাতে থাকে— যে আগ্রহ দিয়ে ওই নিশ নিয়ে আপনি অন্তত তিন-চার বছর ওয়েবসাইট চালাতে পারেন।

  • নিশে মনিটাইজ করার সুযোগ আছে কি-না।
  • ভালো অ্যাফিলিয়েট প্রডাক্ট আছে কি-না।
  • অ্যাডের মধ্যে নিশটা কেমন কাজ করবে।
  • ইউএসএ’র মার্কেটে কেমন চলবে ইত্যাদি ।

এই জিনিসগুলো দেখে নিশ সিলেক্ট করা ভালো।

(এছাড়াও নিশ রিসার্চের আদ্যোপান্ত জানতে চাইলে দেখতে পারেন!)

2. কীওয়ার্ড রিসার্চঃ

নিশ রিসার্চের পর এবং সিলেকশনের পর এবার কীওয়ার্ড রিসার্চের পালা। কীওয়ার্ড রিসার্চের সময় প্রথমেই দেখবেন, যে নিশটা সিলেক্ট করেছেন সেটার মধ্যে ইজি কীওয়ার্ড পাচ্ছেন কি-না যেটা নিয়ে সহজেই লিখতে পারবেন।

একটা নতুন সাইটের অথরিটি একদম জিরো থাকে। তাই শুরুর দিকে কীওয়ার্ড বাছাই করতে হবে সাবধানে।  শুরুর দিকে র‌্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য একদম ইজি ইজি কীওয়ার্ড নিয়ে আগাতে হবে। কীওয়ার্ড রিসার্চ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে দেখে ফেলুন!

তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – যা কীওয়ার্ড রিসার্চ করার সময় মনে না রাখলেই নয়— কীওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে ক্যাটাগরি মেইনটেইন করে।

ধরুন, আপনি একটি সাইট বানাচ্ছেন হোম অফিস নিয়ে। কিভাবে বাসার ভেতরেই আগাগোড়া একটা অফিস বানানো যায়৷ এখানে আপনি যেনতেন ভাবে ছড়ানো-ছেঁটানো কীওয়ার্ড রিসার্চ না করে অবশ্যই ক্যাটাগরি মেইনটেইন করবেন।

হোম অফিস বানানোর জন্য কী কী লাগবে, কিভাবে একটা হোম অফিস বানানো যায়, কতদিন সময় হাতে রেখে কাজ করতে হবে এগুলো ভেবেচিন্তে কীওয়ার্ড সিলেক্ট করবেন। দেখা গেল, অফিসের জন্য জরুরি জিনিস হচ্ছে চেয়ার এবং ডেস্ক।

এই চেয়ার ও ডেস্কের মধ্যে কী কী কীওয়ার্ড পাচ্ছেন এবং যাবতীয় এমন বিষয়বস্তুর মধ্যে কী কী কীওয়ার্ড পাচ্ছেন তা ভাগ করে ক্যাটাগরি অনুযায়ী কীওয়ার্ড রিসার্চ করুন।

এভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে দেখবেন আপনি ৪০ – ৫০ টা কীওয়ার্ড পাচ্ছেন কি-না যেগুলো র‌্যাঙ্ক করা সহজ। যদি আপনি ক্যাটাগরি মেইনটেইন করে কীওয়ার্ড রিসার্চ করেন তাহলে কিন্তু আপনার জন্য কীওয়ার্ড পাওয়াও বেশ সহজ হয়ে যাবে।

৪০,৫০ টা কীওয়ার্ড পাবার পরে আপনি নিশ্চিন্তে আপনার সিলেক্টেড নিশটা ফাইনাল করতে পারেন।

3.ডোমেইন কেনাঃ

ডোমেইন কেনার সময়, আপনার যে নিশ সেটার এক স্টেপ ওপরের ডোমেইন কেনা ভালো। এমন ডোমেইন কেনা ভালো, যেটার একটা ব্র্যান্ড এবিলিটি আছে এবং যে ডোমেইন সিলেক্ট করলে আপনি আপনার নিশ ছাড়িয়েও বাইরে কাজ করতে পারবেন৷ যেমন, আপনি এখন কাজ করছেন হোম অফিস নিয়ে। হয়ত হোম অফিস নিয়ে আপনি তিন-চার বছর কাজ করবেন।

এরপর যাতে আপনি হোম রিলেটেড আরো নিশ নিয়ে কাজ করতে পারেন এমনই একটি ডোমেইন নেম সিলেক্ট করুন। অর্থাৎ, একটা ব্রড ডোমেইন নেইম নিয়ে আপাতত যে ছোট বিষয়টা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন সেটার প্রতি ফোকাস করুন। এরপর ধীরে ধীরে অন্য দিকে যান।

এমন ডোমেইন নেইম সিলেক্ট করার কারণে, আপনার অকারণে থমকে যাবার সম্ভাবনা কমে আসে। আপনার কাজের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট হয়ে যায় না।  সো, ডোমেইন কেনা ও ডোমেইন নেইম সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে সচেতন হউন।

4.সাইট ডিজাইনঃ

সবকিছুরই একটা দেখার সৌন্দর্য রয়েছে- আপনার ওয়েবাসাইটটিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়৷ সাইট ডিজাইন করতে পারেন আপনি নিজেই। এজন্য আহামরি কিছুর প্রয়োজন নেই। 

ভালো একটা থিম ব্যবহার করতে পারেন৷ অনেকের প্রশ্ন থাকে, থিম কেনা জরুরি কি-না৷ ফ্রী থিম ইউজ করেও আপনার সাইট ভালো করে সাজাতে পারবেন৷  ( থিম নিয়েও রয়েছে ডিটেইলস আলাপ, দেখে নিন!)  

সাইটের সৌন্দর্য বাড়াতে বেশি জাঁকজমকপূর্ণ অ্যানিমেশন, থিম বা ডিজাইন— কিছুরই প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু একটা প্রফেশনাল লুক’এর।

আপনার ওয়েবাসাইটকে যদি সাজিয়ে গুছিয়ে একটা প্রফেশনাল লুক দিতে পারেন, তাহলে আর চিন্তা কিসের!

5. কনটেন্টঃ

একটা ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তার কনটেন্ট। কনটেন্ট রাইটিংয়েও ধারাবাহিকতা এবং ক্যাটাগরি মেইনটেইন করা জরুরি।

একটা গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হচ্ছে –  কীওয়ার্ড রিসার্চের সময় যেকোনো একটা বিষয়ে একটা কীওয়ার্ড সিলেক্ট করা হয়। কিন্তু, কনটেন্ট রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে যেকোনো একটা টপিক নিয়ে একটা কনটেন্ট লিখেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত না৷

আপনি যদি চেয়ার নিয়ে আর্টিকেল লিখতে চান তাহলে লাগাতার দশ বারোটা আর্টিকেল লিখুন শুধুমাত্র চেয়ার নিয়েই৷ এতে করে এই প্রডাক্ট- অর্থাৎ, চেয়ারের ওপর আপনার একটা দখল বসে যাবে। এজন্য গুগলও আপনাকে প্রায়োরিটি দেবে এবং আপনি সহজেই র‌্যাঙ্ক করতে পারবেন। যদিও এটা একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তা-ও চালিয়ে যান।

একটা টপিক নিয়ে দশ বারোটা আর্টিকেল লিখে তারপর অন্য বিষয়ে যান। আবার সেটা নিয়েও দশ বারোটা আর্টিকেল লিখুন। এভাবে চলতে চলতে দেখবেন  সাত আট মাস পর  আপনার সাইটে ট্রাফিক আসা শুরু করছে!  এরপর আপনি চাইলে আপনার সাইটে অ্যাড বসিয়ে দিতে পারেন।

ওয়েবসাইট শুরু করার সাথে সাথেই অ্যাড দেয়া জরুরি না৷ একটা সার্টেইন পার্সেন্টেজ ট্রাফিক আসার পরে অ্যাড/ইজউইক দেয়া ভালো। এছাড়া চাইলে প্রথমেও দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তেমন অসুবিধা হবে না।

ওয়েবসাইটে অ্যাড দেয়া শুরু করার পরই চেষ্টা করবেন আপনার নিশ রিলেটেড প্রোডাক্ট অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে যে শুধু রিভিউ কনটেন্টই দেবেন তা কিন্তু না। এখানেও সতর্কতা হচ্ছে, আপনি আপনার ওয়েবাসাইটে ১০% – ২০% পর্যন্ত রিভিউ কনটেন্ট রাখতে পারবেন। পরিমাণটা এরচে’ বেড়ে গেলেই গুগল আপনাকে পেনাল্টি দিতে পারে।  তাই রিভিউ কনটেন্টের চেয়ে বেশি ইনফরমেটিভ কনটেন্ট রাখুন।

ইনফরমেটিভ কনটেন্টের ভেতরে ইনডিরেক্টলি  অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করুন৷ আর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু অ্যামাজনেই সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য নেটওয়ার্কেও যুক্ত হোন। আমাজন ছাড়াও অনেক ভালো ভালো নেটওয়ার্ক হয়েছে।

তো, অ্যাড এবং অ্যাফিলিয়েট — এই দু’টো বিষয় আপনি মনিটাইজ করবেন। এ বাদেও আরও মনিটাইজ করতে পারেন – গেস্ট পোস্ট, স্পন্সর পোস্ট ইত্যাদি। এভাবে চলতে চলতে আপনার ইনকাম ৫০০ ডলার থেকে শুরু ১৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

“এক হাজার ডলার আয়” হতে কত সময়?

আসলে এটার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই বললেই চলে। নির্ভর করে আপনার একাগ্রতা, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের ওপর। যদি মনযোগী হোন, রেগুলার কাজ করেন তাহলে আশা করা যায় এক দুই বছরের মধ্যেই হাজার ডলার ইনকাম করা পসিবল। 

এটা কিছুটা আপনার নিশের ওপরও নির্ভরশীল।  যেমন, আপনার নিশ রিলেটেড প্রোডাক্টের চাহিদা কেমন, আপনি সেখান থেকে কেমন কমিশন পাচ্ছেন, অ্যাড রিভিউ কেমন আসে, RPM কেমন আসে ইত্যাদির ওপর।

আয় করার মত একটা ওয়েবসাইট বানানোর খরচ কত?

ওয়েবসাইট বানাতে প্রথমেই  ডোমেইন, হোস্টিং জরুরি।

ডোমেইন হোস্টিং আপনি যেকোনো জায়গা থেকে নিতে পারবেন। বাংলাদেশী ডোমেইন হোস্টিং ও নিতে পারেন আবার বিদেশি ডোমেইন হোস্টিং ও নিতে পারেন। বিদেশি ডোমেইন হোস্টিংয়ের ভেতর নানা ধরনের ডোমেইন হোস্টিং পাবেন।

প্রিমিয়াম ও আছে, আবার সাধ্যের ভেতরের চিপ ডোমেইন হোস্টিং ও পাবেন৷ বিদেশি ডোমেইন হোস্টিং কিনলে প্রথম বছরে পঁচিশ ডলারের মত লাগতে পারে। অথবা কম-বেশিও হতে পারে।

আর, বাংলাদেশী ডোমেইন হোস্টিং কিনলে প্রথম বছরে পঁচিশ’শত থেকে তিন হাজারের মত খরচ পড়বে।

ডোমেইন,হোস্টিং ছাড়া যেহেতু ওয়েবসাইট অসম্ভব তা-ই এই খরচটা বাধ্যতামূলক। 

এরপরে যে খরচটা হতে পারে— কন্টেন্টের ওপর।

যদি আপনি নিজেই নিজের কনটেন্ট সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরী করতে পারেন তাহলে তো এই খরচ বেঁচে গেলো। কিন্তু, যদি তা না পারেন কোনো কারণে তাহলে কনটেন্ট রাইটার অথবা এজেন্সি হায়ার করতে হবে এবং এখানে একটা খরচ হবে। বলা হয়, ওয়েবসাইটের মেজর খরচটাই হয় কনটেন্টের পেছনে।

আর, যেহেতু কনটেন্টই হচ্ছে একটা ওয়েবসাইটের প্রাণ তা-ই এর পেছনে খরচ করতে কিপটেমি না করাই ভালো!

এরপরের খরচের খাত হচ্ছে – ‘ ইমেজ ‘।

অতীতে সি ইমেজ দিয়ে কাজ চললেও বর্তমানে প্রিমিয়াম ইমেজ জরুরি। আপনি যে নিশ নিয়ে কাজ করছেন, সেটার জন্য প্রায়ই খুব ভালো মানের ছবির দরকার পড়বে। এ কারণে প্রিমিয়াম কিছু সাইট থেকে ইমেজ কালেক্ট করতে হবে।

সাবস্ক্রিপশন বেইসড ওয়েবসাইট থেকে মান্থলি পেমেন্টের মাধ্যমে ইমেজ নিতে পারেন। ওয়েবসাইটে ভালো মানের ইমেজ থাকা মানেই কিন্তু ওয়েবসাইটের গুণগত মান বেড়ে যাওয়া। তা-ই, এখানেও কিপটেমি নয়!

আরো চাইলে থিমের পেছনেও ঢালতে পারেন টাকা। কিন্তু, এটা খুব জরুরি না। খুব বেশি শৌখিন হলে প্রিমিয়াম থিম কিনতে পারেন, সাজাতে পারেন ওয়েবসাইট।  কিন্তু, আসলে একটা ওয়েবসাইট সাজাতে আহামরি খরচের প্রয়োজন নেই৷ একটা ভালো মানের ওয়েবসাইট ফুটে ওঠে তার প্রফেশনাল লুক’এর মাধ্যমে। 

তাই যতটা সম্ভব ওয়েবসাইটটিকে প্রিমিয়াম লুক দেবার চেষ্টা করবেন৷ এজন্য খুব বেশি অ্যানিমেশন, খুব বেশি টাকা-পয়সার দরকার নেই।

এই হলো- ওয়েবসাইট থেকে মাসে হাজার ডলার ইনকামের একটা সহজ-সরল রোড ম্যাপ। পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ পেইজ ভিউ না হওয়া পর্যন্ত এই রোড ম্যাপ ফলো করলে আপনার খাদে পড়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।

Similar Posts