যে পাঁচটি কাজে ব্লগাররা সময় নষ্ট করে থাকে!

নতুন নতুন ব্লগিং শুরু করার পরে এক্সাইটমেন্ট থেকেও অনেকে অনেক ধরনের ভুল করে থাকেন।

এরকমই একটা ভুল হচ্ছে, অযথা কাজে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলা। এই অযথা কাজ বলতে এমন কিছু কাজ, যা করে ব্লগাররা ভাবে হয়তো এতে তাদের বেশ উপকারই হচ্ছে।

কিন্তু, আদতে কি এতে সত্যিই উপকার? না-কি মুখোশধারী অপকার?

এমন পাঁচটি ‘ অযথা ‘ কাজ, যা করে ব্লগাররা সময় নষ্ট করে— এ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

1.অতিরিক্ত Google Analytics এবং Dashboard চেক করা:

আমরা যখন ডায়েট শুরু করি তখন দেখা যায়, মিনিট দশেক পরপরই গিয়ে ওজন চেক করি। পাঁচ মিনিট এক্সারসাইজ করলে দশ মিনিট আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাটিয়ে দিই— ” ইশশ! পেটটা এবার কমলো ” বলে।

এতে দেখা যায়, এক্সারসাইজে ঘাঁটতি হয়।

ঠিক এরকমই উত্তেজনা কাজ করে নতুন নতুন ওয়েবসাইট চালু করলে। মিনিটে মিনিটে পেইজ ভিউ, ড্যাশবোর্ড, ডলার ইত্যাদি চেক করতে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু, এত বারবার এগুলো চেক করা মোটেই ভালো কাজ না। কারণ,

  • প্রধানত, বারবার Google Analytics, Amazon Dashboard ইত্যাদি চেক করলে আপনার ইনকামের ঝুলিতে কয়েক ডলার বেশি আসবে না।
  • নতুন একটা ওয়েবসাইটে হুট করেই ট্রাফিক বেড়ে ঢোল হয়ে যায় না। ট্রাফিক জিনিসটা এমন, যেটা আপ-ডাউন করে। আজকে বাড়লে কালকেও যে বাড়বে— এমন কথাই নেই। কালকে কমলো, পরশু আবার একটু বাড়লো, তারপর দিন আবার বাড়তেও পারে বা কমতেও পারে। এজন্য প্রতিদিনই যে ভালো রেজাল্ট শো করবে, বিষয়টা এমন না। এজন্য প্রতিদিন চেক না করাই ভালো।
  • ক’জন আসলো, কালকের চেয়ে ক’জন ভিজিটর বাড়লো এসব গুনে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ পাওয়া গেলেও, যখন দেখবেন গত কালকের চেয়ে আজকে দশজন ভিজিটর কম, কালকের চেয়ে আজকে ট্রাফিক কম— তখন মনটা হতাশ হবে। এমনকি চুলও ছিঁড়তে ইচ্ছে করতে পারে। পাশাপাশি একটা ভয় কাজ করে যে, আমার কোনো ভুল হলো কি-না, ওয়েবসাইট ড্রপ খাবে কি-না ইত্যাদি। কিন্তু আসলে এমন কিছুই না। নতুন একটা ওয়েবসাইটকে সাস্টেনেবল ইনকামসোর্স হয়ে উঠতে বেশ কিছু সময় প্রয়োজন।

এজন্য সময় নিন। কম সময়ে বারবার রেজাল্ট চেক করে হতাশ হবেন না। হতাশা আমাদের কাজকে স্লো করে দেয়। হতাশ না হয়ে কন্টেন্ট কোয়ালিটিতে মনযোগী হোন।

আপনার কনটেন্ট কোয়ালিটি যত ভালো, আপনার ওয়েবাসাইটের ভবিষ্যৎ ও ততই উজ্জ্বল!

2. ডিজাইন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা:

শৌখিন মানুষ হোক বা রসকষহীন— সবাই চায় একটা সুন্দর থিম, সুন্দর ডিজাইন। এই চাওয়াটা কোনো দোষের কিছু না। কিন্তু, সুন্দর থিম গোছাতে গিয়ে সময় নষ্ট করে ফেলাটা অবশ্যই দোষের।

অনেকে এমনও ভাবেন যে, ” আমি তো এই থিমে কাজ করতে পারছি না, এই কালারটা পছন্দ না, অমুকের ওয়েবসাইটে তমুক ফাংশনালিটি আছে আমারটায় কেন নেই ” ইত্যাদি। এসব অযথা চিন্তা-ভাবনা করে দিন নষ্ট করেন, নষ্ট করেন মাস ও!

যদি আপনার ওয়েবাসাইটে একটা ভালো মানের থিম থাকে, ওয়েবসাইটটা মার্জিত করে সাজাতে পারেন, কনটেন্ট গুলো ভালো করে পড়ার উপযোগী করে তুলতে পারেন এবং একটা বেসিক প্রফেশনাল লুক ক্রিয়েট করতে পারেন— তাহলে থিম / কালার / ডিজাইন নিয়ে হেভী চিন্তা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলুন।

প্রথমত, কনটেন্ট কোয়ালিটির দিকে মনযোগী হোন। কোয়ালিটি ভালো হলে ডিজাইন নিয়ে পরে ভাবতে পারবেন। ওয়েবসাইট যখন বড় হবে তখন ডিজাইন নিয়ে মাথা ঘামানোর মোক্ষম সময়। তখন পরিধি বড় হলে ভাবতে হবে যে, কোন কালার কম্বিনেশনটা আকর্ষণ করবে, কোনটা কোথায় বসালে ভালো লাগবে— এসব।

প্রশ্ন হচ্ছে, কোন থিম ইউজ করা ভালো?  ফ্রি না-কি পেইড?

আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি যেকোনো থিম ইউজ করতে পারেন!

3. শর্টকাট খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট:

একটা সাস্টেইনেবল আর্নিং সাইট তৈরী করার জন্য তিনটা জিনিস অবশ্যই প্রয়োজন।

  1. Good Keyword Research
  2. Good Content of those keywords
  3. Be patient

এই তিনটা জিনিসের বেলায় অনেকেই শর্টকাট পদ্ধতি অবলম্বন করতে চান। যেমন,

কীওয়ার্ড রিসার্চের বেলায়—

অনেকেই একটা টুল নিয়ে র‌্যান্ডমলি একটা কীওয়ার্ড নিয়ে নেন। টুল যা দেয়, তা-ই নেন। এরপর ম্যানুয়ালি চেক ও করেন না। আসলে একটা টুল আপনাকে যে কেডি দেবে সেটা দিয়ে কোভাবেই ভালো একটা কীওয়ার্ডের ডিফিকাল্টি বোঝা যাবে না। 

এরপর কনটেন্টের বেলায়—

সময় বাঁচাতে AI Generated Content Tool ব্যবহার করেন। যারা AI নিয়ে টুকটাক জানেন, তাদের জানার কথা যে, জেনারেটেড কনটেন্টের কোয়ালিটি কেমন। একটা সাসটেইনেবল ওয়েবসাইটের জন্য কোনোমতেই AI Generated Content হেল্পফুল না! দেখা যায়, সময় বাঁচানোর জন্য এটা ব্যবহার করলেও ভালো আউটপুট পাওয়া যায় না। নতুন করে আবার এই কনটেন্টের পেছনে সময় দেয়া লাগেই। আরো অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে AI Generated Content এ। (বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ুন।)

ধৈর্য্য ধারণের বেলায়—

একটা কনটেন্ট দেয়ার পর সাধারণত সেটা র‌্যাংক করতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। এই সামান্য কয়েক মাস ধৈর্য্য ধরতেই অনেকের নাকের পানি–চোখের পানি এক হয়। সেই নাকের পানি–চোখের পানি অপচয় না করার জন্য বিকল্প হিসেবে নিয়ে আসেন ব্যাকলিংক!

তাহলে ব্যাকলিংক কী খারাপ কিছু?  মোটেই না। ব্যাকলিংক একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও, এটার জন্য কারো কাছে গিয়ে হাত পাতা, ভিক্ষা করা, মরিয়া হয়ে ওঠা মোটেই ভালো নয় বরং এটা সম্পূর্ণই গুগল পলিসি বিরুদ্ধ!

এজন্য দেখা যায়, যারা এমন করে ব্যাকলিংক কালেক্ট করে তাদের অধিকাংশের ওয়েবসাইটই ড্রপ খেয়ে গেছে। বাকী যারা টিকে আছে তাদের হালতও আহামরি ভালো বলা মুশকিল!

4. লোভে পড়ে সময় নষ্ট:

অধিকাংশ সময় বড় মনের পরিচয় দিতে গিয়ে ঠিক করে বসেন, ” আমি এক হাজার Search Volume এর নিচে আর্টিকেলই লিখব না! বেশি Search Volume নিলে বেশি লাভ।”

আসলে এসবের কোনো মানেই হয়না। কারণ, আপনি যে কীওয়ার্ড রিসার্চ টুলগুলো থেকে Search Volume গুলো দেখছেন ৯৯% সময় সেগুলো আপনাকে ঠিক তথ্য দেয় না। ধরুন,  অনেক ওয়েবসাইটে এমন অনেক আর্টিকেল আছে যেগুলো মাসে হাজার বার ভিজিট হয়। কিন্তু, মজার বিষয় হলো এসব আর্টিকেলের Keyword Research Tool গুলোতে Search Volume শো করে একদম জিরো!

সুতরাং, বুঝতেই পারছেন গলদটা আসলে কোথায়!

তাই Search Volume দেখে একদমই বিশ্বাস করার প্রয়োজন নাই। এজন্য ম্যানুয়ালি Keyword Research করতে হবে। Keyword key এর যাচ্ছেতাই কথামত না চলাই ভালো!

5. অতিরিক্ত রিভিউ কনটেন্ট লেখা:

অতিরিক্ত রিভিউ কনটেন্ট লেখা ওয়েবসাইটের জন্য বিপজ্জনক। একটা ওয়েবসাইটে ২০% – ২৫%  রিভিউ কনটেন্ট এবং বাকী ৮০% – ৮৫% ইনফরমেটিভ কনটেন্ট রাখা উচিত৷ কারণ,  কোনো ওয়েবসাইটে বেশি রিভিউ কনটেন্ট থাকলে গুগল সেই ওয়েবসাইটকে পেনাল্টি দিয়ে দেয়।

এজন্য, বেশি ইনকামের আশায় অতিরিক্ত রিভিউ কনটেন্ট না দিয়ে ইনফরমেটিভ আর্টিকেল দিয়েই কৌশল করে ইনকাম বাড়ানো সম্ভব।

যেমন, ইন্টারনাল লিংক করে বা ফিক্সড সাইডবার এড দিয়ে।

মোটকথা, আপনি যে ধরনের আর্টিকেলই দেন না কেন- ভিজিটর আসলে ইনকাম হবেই। এক্ষেত্রে যেহেতু রিভিউ কনটেন্টের চেয়ে ইনফরমেটিভ কনটেন্ট রাখা ওয়েবসাইটের জন্য সুবিধাজনক সেহেতু ইনফরমেটিভ কনটেন্টেই মনোযোগী হওয়া উচিত।  

এছাড়াও আরো একটি কারণ রয়েছে যেটা প্রায় সবাই ই করে থাকে— সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট৷

দেখা যায়, অনেকেই একটা ওয়েবসাইট খুলেই সাথে সাথে সেটার জন্য ফেসবুক, ইউটিউব, পিন্টারেস্ট, ইন্সটাগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পেইজ খুলে ফেলেন। এতে আসলে তেমন সুবিধা নেই বললেই চলে। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলোতে Ad না দেন তাহলে এসব প্রথম প্রথম এড়িয়ে চলাই আপনার জন্য ভালো। 

এইতো, কয়েকটি সময় নষ্ট করা কারণ সম্পর্কে বিশদ জানা হলো। এরপর মাঠে নামার পরে নিজেরাও উপলব্ধি করবেন যে, কোন কোন কাজে আসলে লাভ হচ্ছে আর কোন কাজে হচ্ছে সময় নষ্ট। এরপর সবগুলো কারণ ধরে বেঁধে সাইডে ফেলে রেখে সামনে এগিয়ে যান, পেছনে তাকানোর প্রশ্নই আসে না!

Similar Posts