Passive Income এর খুঁটিনাটি— যেসব আপনি জানেন না!

আমরা ইনকাম কেন করি?

এই প্রশ্নের প্রথম এবং জনপ্রিয় যে উত্তরটা হতে পারে সেটা হচ্ছে — আমরা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য ইনকাম করি। এই-যে বেঁচে থাকার জন্য রোজগারটা করি সেটা যেকোনো কাজের মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু, এই ইনকামের কিছু রকমফের রয়েছে। প্রথমত, ইনকামের ধরনটাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করি।

  1. একটিভ ইনকাম
  2. প্যাসিভ ইনকাম

আজকের আলোচনা মূলত প্যাসিভ ইনকামের খুঁটিনাটি নিয়েই তবে সেটা জানতে হলে প্রথমে একটু একটিভ ইনকাম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—

Active Income:

বাবু সাহেব একটা কর্পোরেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার অফিস টাইম সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা। এই-যে সে প্রতিদিন নিয়ম করে অফিস যান, নয়টা – পাঁচটা অফিস করেন তারপর বাসায় ফেরেন এবং তার এই নিয়মিত কার্যক্রমের জন্য মাস শেষে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট এমাউন্টের একটা মাইনে পান। এই মাইনেটা সে তার নয়টা – পাঁচটা সময়ের পার্সপেক্টিভে এবং এই সময়ের মধ্যে করা কাজের পার্সপেক্টিভে পেয়ে থাকেন।

কিন্তু, যদি সে হঠাৎ করে এক দু’মাস অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেন তাহলেও কী তার রেগুলার মাইনেটা চলতে থাকবে?

উত্তর হচ্ছে- না। বেচারা মাইনের সাথে সাথে তার চাকরিটাও হারাতে পারেন!

এইযে একটা কর্পোরেট জব, রেগুলার আসা যাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ের কাজ এসবের পার্সপেক্টিভে মাস শেষে যে বেতনটা আসে— এটাই হচ্ছে মূলত Active Income । 

আপনার জব হয়েছে, কাজ করছেন, মাস শেষ— টাকা আপনার পকেটে। ব্যাপারটা হলো, আপনি মাসের শুরুতেই বলে দিতে পারছেন, আপনি এই জবটা জয়েন করেছেন মানে মাস শেষে আপনার পকেটে মাইনে আসবেই।

তাহলে Passive Income টা কী?

Passive Income:

ধরেন, মাস ছয়েক নয়টা পাঁচটা অফিস করার পর বাবু সাহেবের মনে হলো সে এই আসা যাওয়া আর করতে পারবে না এবং এত ঘন্টা সময়ের বিনিময়ে নির্দিষ্ট এমাউন্টে তার কুলোচ্ছে না৷ সে একটা ওয়েবসাইট বানালো, রেগুলার কনটেন্ট দেওয়া শুরু করলো, এড মনিটাইজেশন, প্রডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি করা শুরু করলো।

কিন্তু, এক মাস, দু’মাস, তিন মাস পেরিয়ে ছ’মাসও হয়— টাকার মুখ আর বাবু সাহেব দেখেন না। এক পর্যায়ে এসে সে হতাশ হয়ে পড়লেও হাল ছাড়েন না। টানা দেড় দু’বছর রেগুলার ওয়েবসাইটের পেছনে সময় দেন, ব্লগিংয়ে সময় দেন। এক পর্যায়ে দেখা যায়, পয়সা তার চেহারার দিকে তাকাতে শুরু করে।

এমন সময় আনন্দে সে দু’মাসের একটা বড়সড় ট্যুর প্ল্যান করে। যে সময়টাতে সে তার কাজ সাময়িক বন্ধ রাখে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, একসময় সে এই লম্বা ট্যুর দিয়ে এসেও দেখে তার ইনকাম আসলে বন্ধ হয়নি বরং চলছে তো চলছেই!

সুতরাং, এটা হচ্ছে Passive Income । আরো ভালো করে যদি বলতে চাই— প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য আপনার একটা Asset থাকতে হবে। সেটা হতে পারে কোনো App, কোনো Website অথবা কোনো YouTube Channel । প্যাসিভ ইনকামের বেলায়, আপনার কাঙ্ক্ষিত Asset টা বানানোর পরে সেটাতে কাজ করতে করতে যতদিন না একটা নির্দিষ্ট পর্যায় যায় আপনি ওটা থেকে কোনো টাকা পাবেন না।

তো, প্যাসিভ ইনকামে আপনি যে শ্রমটা দেবেন সেটার পার্সপেক্টিভে সাথে সাথে টাকাটা তো পাবেনই না এমনকি— কতটুকু শ্রম দিচ্ছেন, শ্রমের সাপেক্ষে টাকা পাবেন কি-না, বা কবে পাবেন এটাও বলা যায় না।

বিষয়টা একটু মজার!

ধরেন, আপনি একটা আম গাছ লাগালেন। বীজ রোপন করলেন, পানি দিলেন, প্রথম মাসে একটা চারা উঠলো। এখন এ মাসেই কিন্তু আপনি আম পাবেন না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এটার সেবা করা লাগবে। এরপর এটা যখন বড় হবে তখন এটা থেকে একটা রেজাল্ট পাবেন। তো, আপনার রেজাল্ট পাওয়ার জন্য প্রথমত একটা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা এবং শ্রম দিয়ে যেতে হয়েছে।

এরপরে, কোনো কারণে সাত আট বছর হয়ে যাওয়ার পর যদি একদিন পানি না দেন তাহলে কি আম গাছটা আম দেবে না? অবশ্যই দেবে। তখন অ্যাজ ইউজুয়াল, আম গাছটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে বলা যায়!

প্যাসিভ ইনকামের ব্যাপারটা কিন্তু এমনই।

এবার প্র্যাকটিক্যাল এক্সাম্পলে আসি। ধরেন, ব্লগ সাইট নিয়েই যদি বলি— আপনি অনেকদিন টানা কিখলেন। লিখতে লিখতে ভালো ট্রাফিক আসা শুরু করবে যখন তখনই ব্লগ থেকে আপনি একটা এমাউন্ট পাওয়া শুরু করবেন। তখনই এই ব্লগসাইটটা আপনার একটা ইনকাম সোর্স হয় দাঁড়াবে। একটু মজা করে বললে, আম গাছের মত নিজের পায়ে দাঁড়াবে!

তারপর, একদম সিমিলারলি এই পর্যায়ে এসে যদি আপনি ব্লগসাইটে পাঁচদিন কাজ না-ও করেন তাহলেও আপনার ইনকাম থেমে থাকবে না।

তাহলে Active এবং Passive Income এর ক্ষেত্রে মূল পার্থক্যটা হচ্ছে,

Active Income এর বেলায়—

  • রেগুলার কাজ করে যেতে হবে।
  • নির্দিষ্ট একটা সময়ও দিতে হবে।
  • মাস শেষে নির্দিষ্ট একটা এমাউন্ট মাইনে আসবে।

আবার, Passive Income এর বেলায়—

  • নির্দিষ্ট একটা এসেট নিয়ল কাজ শুরু করতে হবে।
  • প্রথমদিকে টাকার চেহারা না দেখেই কাজ করে যেতে হবে।
  • বছরখানেক পর, এসেটটা দাঁড়িয়ে গেলে ইনকাম আসবে।
  • কিছুদিন কাজে ব্রেক দিলেও, ইনকামে ব্রেক আসবে না।

ব্লগ থেকে কী Passive Income হয়?

আসলে ব্লগ থেকে ১০০% প্যাসিভ ইনকাম হয় না৷ এটা সম্পূর্ণ ডিপেন্ড করে আপনি আপনার ব্লগটা কিভাবে সাজিয়েছেন সেটার ওপর। যেমন—

আমার একটা ব্লগসাইট আছে। আমি যেটার পেছনে এক বছর কাজও করেছি এবং এটা আমাকে মাসে এক হাজার ডলার করে দেয়। এখন আমি ঠিক করলাম, এই ব্লগসাইটে আর কোনো কাজ করবো না। নতুন কাজ করব না, পুরোনো কাজগুলো দিয়েই সাইটটা নিজের মত চলতে থাকুক।

এরকম করার ফলে, প্রথম চার পাঁচ মাস কোনে সমস্যা হবে না ঠিকই কিন্তু একটা সময় গিয়ে এই ইনকামটা নিচের দিকে নামতে থাকবে। কারণ, একদমই কাজ না করে বছরের পর বঋর সেম ইনকাম পাওয়ার বিষয়টা এখন আর হয়না। কিছু না কিছু কাজ করে যাওয়া লাগবেই। এজন্য মাসে তিন চারটা করে হলেও কনটেন্ট আপলোড করতে পারেন, পুরাতন পোস্ট আপডেট করতে পারেন । মোটকথা, কিছু না কিছু করলেনই।

কারন, কাজ করা একদম ছেড়ে দিলে যে ইনকামটা করতেন সেটা একসময় নিচে নেমে যাবে।

কিন্তু, যেকোনো কারণে মাস দুয়েকের একটা ব্রেক কিন্তু আপনি ঠিকই নিতে পারেন। এক্ষেত্রে, দু’মাস তিনমাসের গ্যাপে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। এই যে ব্যাপারটা এটার সেন্সে কিন্তু ব্লগিং থেকেও প্যাসিভ ইনকাম হয়।

কিন্তু লং-টার্ম ব্রেকে গেলেই তখন আর প্যাসিভ ইনকাম থাকবে না।

ব্লগ থেকে কিভাবে Passive Income করা যায়!

ব্লগ থেকে প্যাসিভ ইনকামের বিষয়টা নির্ভর করে ব্লগটাকে কিভাবে মনিটাইজ করেছেন সেটার ওপর। যদি আপনার ব্লগ সাইটটা অ্যামাজন এফিলিয়েট দিয়ে মনিটাইজ করা থাকে তাহলে এই ইনকামটা পুরোটাই প্যাসিভ!

কারণ, আপনি শুধু একবার এটা সেট করে দিয়েছেন, এখন আর কিছু করা লাগে না। এতে হয় কি, সাইটে ভিজিটর আসে, Ad দেখে, লিংকে ক্লিক করে প্রডাক্ট কেনে আর আপনি কমিশন পান— এভাবেই চলতে থাকে। এখানে আপনার আর কিছু করা লাগছে না৷

কিন্তু, আপনার ওয়েবাসাইটটা ড্রপশিপিং দিয়ে মনিটাইজ করলে বা ই-কমার্স দিয়ে মনিটাইজ করলে তখন কিন্তু আপনাকে প্রতিদিন কাজ করা লাগবে। 

সেখানে কাস্টমার প্রডাক্ট অর্ডার করবে— সেটা দেখতে হবে, সাপ্লায়ার কে গিয়ে বলতে হবে, ইত্যাদি কাজগুলো প্রতিদিন করা লাগবে। তখন আর এটা প্যাসিভ ইনকাম নয়, একটিভ ইনকাম হয়ে যাবে।

Active না-কি Passive! কোনটার দিকে যাওয়া উচিত?

আপনি একদম বিগিনার, সবেমাত্র ইউনিভার্সিটি শেষ করছেন। এখন আপনি চাচ্ছেন, অনলাইনের দুনিয়ায় আসতে, ব্লগ থেকে ইনকাম করতে ইত্যাদি। মনে রাখা জরুরি, একটা ব্লগসাইট বানিয়ে ইনকাম করতে দেড় দুই বছর লেগে যায়।

পারিবারিক অবস্থা খারাপ হলে বা ইমিডিয়েটলি কাজে যেতে হবে এমন হলে ব্লগের ক্ষেত্রে না গিয়ে একটা চাকরি খোঁজা উচিত। তার পাশাপাশি একটা এসেট বিল্ডআপ করতে পারেন। শুরুর দিকে কষ্ট হলেও এটাই ম্যাক্সিমাম মানুষ করে। ধরেন, আপনি নয়টা টু পাঁচটা অফিসে কাটলেন রাতের বেলায় ওয়েবসাইটের পেছনেই কাজ করলেন।

এতে অফিসে একটিভ ইনকামের পাশাপাশি প্যাসিভ ইনকামটাও হবে। একসময় দেখা যাবে চাকরি করে যে টাকা পান, প্যাসিভ ইনকামের পরিমাণটা তারচেও বেড়ে গেছে!

এরকম সময়ে গিয়ে চাইলে চাকরী ছেড়ে একদম ফুল ফোকাস দিতে পারেন ওয়েবসাইটে।

তাহলে Passive Income এর খারাপ দিক—

  • শুরুর দিকে রেজাল্ট ছাড়াই কাজ করে যেতে হবে।
  • টাকা-পয়সার মুখ দেখার দিনটি অনির্দিষ্ট।
  • একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না, তাহলে ইনকামের পরিমাণ নিচের দিকে নামতে থাকবে।

এই দিকগুলো মাথায় না রেখে যদি আপনি Passive Income এর দিকে ঝোঁকেন, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে আশাহত হওয়াটাই স্বাভাবিক!

Emergency Fund!

হঠাৎ করে যদি আপনার ওয়েবাসাইটটা একদম ড্রপ খেয়ে যায় এবং আপনি চালচুলোহীন হয়ে পড়েন, তাহলে কী করবেন?

এজন্য, অগ্রীম সাবধানতা অবলম্বন করে একটা ইমার্জেন্সি ফান্ড করে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আপনি আপনার মাসিক খরচের থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা সেভ করে রাখবেন যাতে বিপদে পড়লে একদম রাস্তায় না নামতে হয় এবং এই টাকা দিয়ে কিছুদিন চলতে পারেন পাশাপাশি হাল না ছেড়ে নতুন করে উঠে দাঁড়াতেও পারেন!

তো, এবার সুযোগ বুঝে বেছে নিন আপনার জন্য Passive না-কি Active Income পারফেক্ট!

Dive deeper into Blogging by checking out this article. ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যা প্রতিটি ব্লগারের ফলো করা উচিত! 

Similar Posts