ই-মেইল মার্কেটিং করা কেন দরকার? 

অন্যান্য ইনকাম সোর্সের পাশাপাশি একটা অন্যতম আর্নিং সোর্স হচ্ছে — ই-মেইল মার্কেটিং।  কিন্তু, ই-মেইল মার্কেটিং করার আগে আপনাকে জানতে হবে- এটা কেন করা দরকার!  

ব্যাপারটা এমন নয় যে, আপনাকে ই-মেইল মার্কেটিং করতেই হবে বাধ্যতামূলক। কিন্তু, করলে কি সুবিধা এবং না করলে অসুবিধা এগুলো জেনে আপনিই সিদ্ধান্ত নেবেন — আপনার ই-মেইল মার্কেটিং করা উচিত কি-না। 

ই-মেইল মার্কেটিং ব্যাপারটা আসলে কী? এটা কিভাবে করে? 

ই-মেইল মার্কেটিং করার জন্য প্রথমে মানুষজনের ই-মেইল কালেক্ট করতে হবে। তাদের একটা লিস্ট বানাতে হয়। এই লিস্টটা এমন একটা এসেট হয়, যেটা আপনি পরিপূর্ণ ভাবে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে পারবেন এবং কেউ আপনার কাছ থেকে নিতে পারবে না। 

যেমন- ধরুন আপনার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। যেখানে আপনার 50,000 সাবস্ক্রাইবার আছে। আগামীকাল ইউটিউব চাইলেই এমনকিছু করতে পারে যে, আপনার চ্যানেলটা তারা ব্যান করে দিলো। যেকোনো কারণ দেখিয়ে ব্যান করলো। 

ইউটিউব যদি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে তাহলে আপনার এমন কোনো ক্ষমতাই নেই যে আপনি এই সিদ্ধান্তটা আঁটকাবেন। আপনাকে এক কথায় মেনে নিতে হবে। সুতরাং, আপনার যে ইউটিউব চ্যানেলটা এটার সম্পূর্ণ মালিক আপনি না। দিনশেষে এটার হাইয়েস্ট অথরিটি থাকে ইউটিউবের ওপর। 

আবার, 

ধরলাম আপনার একটা ব্লগ আছে। যেখানেও অনেক মানুষজন আছে। এই মানুষ গুলো অধিকাংশ সময়ই আসে গুগল থেকে বা সার্চ ইঞ্জিন থেকে।  এখন আজকে যদি গুগল সিদ্ধান্ত নেয় যে, আপনার পেইজ আর র‌্যাঙ্ক করাবে না। তাহলে একদম সাথে সাথে আপনার ট্রাফিক একদম ডাউন হয়ে যাবে। সুতরাং, আপনার ব্লগ সাইটের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটবে যেটা ইউটিউবের বেলায় ঘটেছিলো। 

এছাড়াও- 

ফেসবুক পেইজের বেলায়ও একই ঘটনা। হয়ত আপনার ফেসবুকে 60,000 লাইক আছে। ফেসবুক সিদ্ধান্ত নিলো যে সে আপনার পেইজ আর প্রোমট করতে পারবে না। এক্ষেত্রে কিন্তু আপনার হাতে কিচ্ছু নেই, আপনি কিচ্ছু করতে পারবেন না। 

মোটকথা- ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব অথবা যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়ায়ই বলেননা কেন- কোনো কিছুই আপনি শতভাগ নিজের করে পাচ্ছেননা বা নিজের মত কন্ট্রোল করতে পারবেন না। 

কিন্তু, এমন একটা বিষয় হচ্ছে ” ই-মেইল লিস্ট ” যেটা আপনি নিজের ইচ্ছেমত কন্ট্রোল করতে পারবেন। একদম নিজের! ই-মেইল মার্কেটিং করার কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে। যেমন—

সুবিধা নাম্বার এক—

ধরুন, আপনার কাছে 1,000 মানুষের ই-মেইল লিস্ট আছে। এই লিস্টের সম্পূর্ণ মালিক আপনি। এটা কন্ট্রোল করবেন আপনি। এই 1,000 মানুষের কাছে আপনি আপনার ইচ্ছেমত, যখন, যেভাবে খুশী— সেভাবেই রিচ করতে পারবেন। এটা হলো, ই-মেইল লিস্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা। 

অর্থাৎ, আপনার হাতে যে মানুষ গুলো থাকবে তারা আপনারই থাকবে। অন্য কেউ এদেরকে কেড়ে নিতে পারবে না। 

সুবিধা নাম্বার দুই—

ই-মেইল মার্কেটিং করে আপনি একটা কূল অডিয়েন্সের সাথে আস্তে আস্তে ওয়ার্ম-আপ করতে পারবেন। অর্থাৎ, একটা কূল অডিয়েন্সকে ধীরে ধীরে ওয়ার্ম-আপ করে তাদের কাছে নিজের প্রোডাক্ট, কোর্স ইত্যাদি সেল করতে পারবেন। 

ধরুন, আপনি কোনো রাস্তায় গিয়ে অথবা র‌্যান্ডম কোথাও গিয়ে যালে পাচ্ছেন তাকে ধরেই বললেন— ” ভাই,  আমি অমুক। আমার রাইটিং সার্ভিস আছে। আপনি আমার সার্ভিস নেন। আমি এই এই সুবিধা দিচ্ছি। আপনি নিয়ে নেন। ” 

মানুষজন কী আসলেই আপনার সার্ভিস নেবে? মোটেই না। বরং; তারা আপনাকে পাগল ভাববে। তারা আসলেই আপনাকে জানেনা, চেনেনা। আপনি কে, আপনি কি করেন, কিভাবে কি করেন, আপনার কাছ থেকে সার্ভিস নিয়ে তাদের কীই-বা লাভ আর কীই-বা লোকসান— তারা কিছুই জানে না। এক্ষেত্রে এভাবে একজন রাস্তার মানুষের কথায় তারা সার্ভিস কেন নেবে? কোন যুক্তিতে? 

এই মানুষ গুলো হচ্ছে কূল অডিয়েন্স। এই কূল অডিয়েন্সটাকে আপনি ই-মেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওয়ার্ম-আপ করতে পারবেন। 

এজন্য, প্রথমে তাদের ই-মেইল দিলেন যে- আপনি ব্যক্তিটা আসলে কে। এরপরে, আপনি কেন তাদের ই-মেইল দেবেন, আপনি কি কি করবেন, কেন আপনি লেখালেখি ভালো করতে পারেন, পূর্বে আপনার লেখালেখির মাধ্যমে কি কি অর্জন হয়েছে, আপনার লেখালেখির সার্ভিস সম্পর্কিত রিভিউ ইত্যাদি বিষয়ে আস্তে-ধীরে তাদেরকে একটার পর একটা ই-মেইল দিয়েই যাবেন। 

এভাবে কূল অডিয়েন্স যখন ওয়ার্মড হবে, তখনই আপনি খুব সহজেই তাদের কাছে আপনার সার্ভিসটা সেল করতে পারবেন। 

আরো একটা সহজ উদাহরণ যদি দেয়া হয়—

এক্ষেত্রে আপনি সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন মানুষ অথবা এমন কেউ যে মানুষটা আপনার চ্যানেলের বিশটা ভিডিয়ো-ই দেখেছে তাকে বললেন আপনার সার্ভিসটা নিতে। এখন এই মানুষটার বেলায় কিন্তু আপনার সার্ভিসটা নেয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কারণ, সে আপনাকে চেনে। সে আপনার সার্ভিসের জন্য একজন ওয়ার্ম অডিয়েন্স। 

সুতরাং, একটা কূল অডিয়েন্সের থেকে একটা ওয়ার্ম অডিয়েন্সের কাছে সার্ভিস সেল করাটা সহজ। আর এই অডিয়েন্স ওয়ার্ম-আপটা ই-মেইল মার্কেটিং করে খুব সহজেই করা যায়। আপনি চাইলেই একটা অডিয়েন্সকে ওয়ার্ম-আপ করতে পারবেন। এটা ই-মেইল মার্কেটিংয়ের একটা বিশেষ সুবিধা। 

সুবিধা নাম্বার তিন—

এখন যারাই ইন্টারনেট ব্যবহার করে, এমন ৯৯% মানুষের নিজস্ব ই-মেইল আছে। এমন মানুষ খুব কম পাবেন যাদের ই-মেইল নেই। হয়ত অন্যান্য সোশ্যাল সাইট নেই এমন মানুষ অহরহ পাওয়া গেলেও, ই-মেইল নেই এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। অর্থাৎ, ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানেই ই-মেইল আছে এমনটা ধরে নেয়াও দোষের কিছু না!

সুতরাং, যারা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া বা সাইট ( ফেসবুক, পিন্টারেস্ট, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদির যেকোনো কিছু )  ব্যবহার করে না তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন খুব সহজেই। 

সুবিধা নাম্বার চার—

ই-মেইল মার্কেটিং খুব সহজেই স্কেলেবল। অর্থাৎ, একটা ছোট ই-মেইল সাবসক্রাইবারের জন্য আপনার যে কাজ করা লাগবে, একটা বিশাল সাবসক্রাইবার লিস্টের জন্যও আপনার একই কাজ করা লাগবে। এক্ষেত্রে আপনার বাড়তি কোনো কাজ করতে হবে না। 

যেমন- আপনার ই-মেইল লিস্টে এখন 100 জন সাবস্ক্রাইবার আছে। আপনি তাদেরকে একটা ই-মেইল দিলেন। এই ই-মেইলটা লিখতে আপনার যে সময় এবং শ্রম যাবে এই একই সময় এবং শ্রম যাবে যদি আপনার লিস্টে দুই লাখ সাবস্ক্রাইবার ও থাকতো।  একটুও কম বা বেশিও হতো না।  সুতরাং, এই ব্যাপারটা খুব সহজেই স্কেল করা যায়। 

এছাড়া-ও

ই-মেইল মার্কেটিংয়ে কিছু এডভান্স সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। যেমন- অটো রেসপন্ডার সিরিজ, সিকোয়েন্সিং ইত্যাদি। যেগুলো ব্যবহারের ফলে পুরো বিষয়টা অটোমেটিক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটিভ কাজ খুব কম করা লাগে। শুরুর দিকে আপনার কাজ করা লাগবে। কিন্তু, প্রাথমিক কাজ গুলো সব সেট-আপ করার পর নিজের কাজ খুব কম করা লাগে। লিস্ট যতই বড় হোক না কেন,  অটোমেটিকই সব চলতে থাকে। 

তাই বলা যায় – ই-মেইল মার্কেটিংটা খুবই স্কেলেবল! একবার শুরু করার পর বারবার কষ্ট করার কোনো ঝামেলাই নেই। 

সুবিধা নাম্বার পাঁচ —

ই-মেইল মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে আপনি একটা মানুষকে কনভার্ট করার বা তার কাছে আপনি আপনার সার্ভিস সেল করার জন্য অনেক লম্বা একটা সময় পাবেন। যেটা অন্য ক্ষেত্রে হয় না। 

যেমন- Writers Motion এরই একটা কোর্স আছে, যেখানে আর্টিকেল রাইটিং সেখানো হয়৷ এই কোর্সের জন্যই একটা ভিডিয়ো বানানো হলো। যেটা দিয়ে ফেসবুকে Ad দেয়া হলো। এই ভিডিয়োটা একশো’জন মানুষ দেখলো, স্ক্রল করে চলে গেলো। এছাড়া তারা কিছুই করলো না। এই একশো’জন কিন্তু হারিয়ে গেল, তারা Writers Motion এর কোনো কাজেই আসলো না। 

অন্যদিকে, ই-মেইল মার্কেটিং করা হলে— তখন একটা Ad দিলে, সেখানে মানুষজনের নাম এবং ই-মেইল চাইলেন। বিনিময়ে তাদেরকে ফ্রী কিছু একটা অফার করলেন। হতে পারে- একটা পিডিএফ অথবা মিনিকোর্স অথবা যেকোনো কিছু।  

তখন এই Ad টা যদি একশো’জন মানুষ দেখে, তাদের মধ্য থেকে অন্তত বিশজন আপনার কথামত নাম এবং ই-মেইল দেবেই।  এই বিশজন মানুষ নিজ থেকে যতদিন না আনসাবস্ক্রাইব করবে ততদিন পর্যন্ত আপনি তাদেরকে হাতে রাখতে পারবেন। ধীরে ধীরে তাদেরকে আপনার কোর্স সম্পর্কে জানাতে পারবেন এবং সেল ও করতে পারবেন। 

Ad এর বেলায় আপনার তাৎক্ষণিক কাওকে লাগেই সেল করার জন্য এবং যেটা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এজন্য আপনি যখন ই-মেইল মার্কেটিং করবেন, তখন যারা যারা আপনার লিস্টে আছে তাদেরকে আপনি লাইফটাইম পাবেন কোর্স বা প্রোডাক্ট সেল করার জন্য।  সুতরাং, এক্ষেত্রে আপনার কূল অডিয়েন্সকে ওয়ার্ম-আপ করার সুযোগটা ভালো পাচ্ছেন।

সুবিধা নাম্বার ছয়—

আপনার যদি ই-মেইল মার্কেটিং সাবস্ক্রাইবারদের একটা বড় লিস্ট থাকে,  এটা কিন্তু একটা ভালো ট্রাফিক সোর্সও হতে পারে। 

ধরুন – আপনার একটা বড় ব্লগ আছে যেখানে হাজারখানেক মানুষ আছে। সেখানকার ভিজিটরদের নাম, ই-মেইল কালেক্ট করে প্রতি সপ্তাহে তাদের একটা করে ই-মেইল দিলেন। ই-মেইলে আপনার সাপ্তাহিক দুয়েকটা আর্টিকেল লিংক দিয়ে সেগুলো পড়ার জন্য ইনভাইট করতে পারেন। 

হাজারখানেক মানুষ থেকে যদি ৫% মানুষও ওই লিংকে ক্লিক করে থাকে তাহলে প্রতি সপ্তাহে আপনি ৫০ জন মানুষ পাচ্ছেন যেটা প্রতিমাসে দু’শ জন মানুষে গিয়ে দাঁড়াবে।  অর্থাৎ৷, আপনি একটা ছোট ই-মেইল লেখার কারণে প্রতিমাসে দু’শ জন মানুষ এক্সট্রা পাচ্ছেন।  

যদি আপনার লিস্টটা এক হাজারের না হয়ে আরো বেশি— পঞ্চাশ হাজারের হয় তাহলে ভেবে দেখেন আপনার একটা ই-মেইলের কারণে আপনি কত কত রিটার্নিং ভিজিটর পাবেন। লিস্ট যত বড় হবে আপনি আপনার সাইটে তত বেশি রিটার্নিং ট্রাফিক পাবেন। 

এতগুলো সুবিধা দেখে অবশ্যই বোঝার কথা যে, আপনার আসলে কেন ই-মেইল মার্কেটিং করা দরকার। এখন সুযোগ লুফে নেবার জন্য ই-মেইল মার্কেটিং শুরু করতে চাইলে আপনার জন্য আছে কিছু টিপস— 

  • ই-মেইলের জন্য যেভাবে সাবজেক্ট লিখতে হয়, এরকম কিছু সাবজেক্ট লেখার টেমপ্লেট এখানে পাবেন। যে টেমপ্লেটটা ফলো করলে আপনার ই-মেইল গুলোতে অনেক বেশি মানুষ ক্লিক করবে, অনেক মানুষ পড়বে। টেমপ্লেটটূ চাইলে এখানে ক্লিক করে আপনার নাম এবং ই-মেইলটা দিলে টেমপ্লেটটা আপনি ফ্রী তেই পেয়ে যাবেন। 
  • একটা ই-মেইল মার্কেটিং সফটওয়্যার – Convert Kits।  এই সফটওয়্যারটা দিয়ে মূলত ই-মেইল দেয়া হয়। 1,000 সাবস্ক্রাইবার না হওয়া পর্যন্ত এই কনভার্ট কীটটা ব্যবহার করতে চাইলে এখান থেকে ঢুকতে পারেন। 

Similar Posts