এই ৭টি কাজ করলে আপনার নিশ সাইট অবশ্যই ফেইল করবে
একটা নিশ সাইট বানাবেন বলে ভাবছেন? অথবা আপনার একটা নিশ সাইট আছে? তাহলে কিছু কথা জানা খুবই প্রয়োজন, কিছু ভুল শোধরানো প্রয়োজন। এখানে আলোচনা করব এমন সব ভুল কাজ নিয়ে, যেগুলো করলে আপনার নিশ সাইট ফেইল করবে। সুতরাং আপনার উচিত হবে, কাজ গুলো সম্পর্কে জানা এবং সেগুলো এড়িয়ে চলা। চলুন জানি…
1. ভুল নিশ সিলেক্ট করা:
গোড়ায় গলদ অর্থাৎ ভুল নিশ সিলেকশন আমরা অনেকেই করে থাকি। নিশ সিলেকশনে ভুলের বেলায় ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রেই কঠিন নিশ চুজ করে ফেলি। এক্ষেত্রে YMYL অর্থাৎ ” Your Money Your Life ” ক্যাটাগরির নিশ চুজ করা হয়।
এগুলো হচ্ছে ফাইনান্স অথবা হেলথ্ রিলেটেড নিশ। এটা চুজ করলে আপনার নিশ্চিত থাকতে হবে আপনি খুব সহজে ভালো কিছু করতে পারবেন না। কারণ, এই ক্যাটাগরির নিশ অত্যন্ত কঠিন! এগুলোতে র্যাংক করা মুখের কথা নয়।
নরমাল একটা নিশে সাইট বানিয়ে র্যাঙ্ক করতে যতটা সময় লাগে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সময় লাগে এই নিশে। অনেক দিন, অনেক বছর ধরে খাটতে হয়। খুব খাটার পরেও খুব ভালো একটা অথরিটি না হলে গুগল র্যাঙ্ক দেয়না।
এমন নিশ গুলোর মধ্যে হতে পারে— পার্সোনাল ফাইনান্স রিলেটেড নিশ যেমন, Work From home, Earn money online ইত্যাদি। আবার হেলথ রিলেটেড নিশ হতে পারে— New Baby Born, Baby health, COVID ইত্যাদি।
এগুলো নিয়ে চাইলেই খুব সহজে আপনি একটা সাইট বানাতে পারবেন না। এগুলো নিয়ে কাজ করে র্যাঙ্ক করা খুবই কঠিন। দীর্ঘ সময় কাজ করেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়া যায় না। বিগিনার হলে এমন নিশ নিয়ে কাজ করা অনুচিত।
এগুলো ছাড়াও হাজার হাজার নিশ আছে যেগুলো নিয়ে আপনি কাজ করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, যে নিশ নিয়েই কাজ করুন না কেন সেটার প্রতি যেন আপনার কিছুটা হলেও ইন্টারেস্ট থাকে।
কারণ, এখন একটা সাইট বানিয়ে ফেলে রাখলে আর সফলতার মুখ দেখা যায় না। এক্ষেত্রে সাইট বানানোর পরে রেগুলার কাজ করতে হয়। একটা দু’টো কন্টেন্ট দিয়ে ফেলে রেখে সেখান থেকে ইনকাম আশা করা উচিত না। দিনের পর দিন কাজ করতে হয় এখন। কমপ্লিট প্যাসিভ করে ফেলে রাখার সুযোগ নেই।
প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন তবুও। খুবই অল্প সময়ের জন্য। ২/৩ মাসের মত ফেলে রাখতেই পারেন সেখান থেকে একটা প্যাসিভ ইনকাম আসার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু যদি দেড় থেকে দুই বছর বা এমন দীর্ঘ সময় ফেলে রাখেন তাহলে সেই সাইটটা একদম অকেজো হয়ে যাবে।
এজন্য যে নিশ সিলেক্ট করবেন সেটা নিয়ে আপনার দীর্ঘদিন কাজ করতে হবে। সেটার প্রতি প্যাশন না থাকলেও অনেকটা আগ্রহ থাকা উচিত।
2. ভুল কীওয়ার্ড রিসার্চ করা:
সঠিক কীওয়ার্ডে লেখা কন্টেন্ট আপনার যতখানি উপকার করবে, ভুল কীওয়ার্ডে লেখা কন্টেন্ট ততটাই ক্ষতি করবে। যদি আপনার কীওয়ার্ড ভালো না হয়, তাহলে যত ভালো লেখাই লেখেন না কেন, যত ভালো রাইটার দিয়েই লেখান না কেন, আপনার পোস্ট র্যাঙ্ক করবে না।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কীওয়ার্ড ভালো হলে কন্টেন্টটা খারাপ হলেও পোস্ট র্যাঙ্ক করতে পারে। সুতরাং র্যাঙ্ক করার ক্ষেত্রে কীওয়ার্ডের গুরুত্ব অনেক বেশি। কীওয়ার্ড রিসার্চ সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে দেখে ফেলুন এই প্লেলিস্ট!
কীওয়ার্ড রিসার্চ এমন একটা কাজ যেটা শেখার শেষ নেই। কোনো নির্দিষ্ট ফরমুলা শিখে এটা পুরোপুরি আয়ত্বে নিতে পারবেন না। এখানে অনেকটা নিজের ব্রেইনের ও ব্যবহার করতে হবে।
শিখতে শিখতে নিজেকেই বুঝতে হবে, মানুষজন কোন কীওয়ার্ড বেশি সার্চ করে। শিখতে শিখতে অগণিত ভালো টেকনিক বের করা যায়। যত ঘাটবেন, তত শিখবেন, তত নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করবেন।
এজন্য কীওয়ার্ড রিসার্চ করার নির্দিষ্ট প্যাটার্ন না থাকলেও এটা সম্পর্কে শেখার পরিধি অনেক বেশি। সুতরাং Keep practicing and keep learning!
3. Patient না হওয়া:
আপনার সাইটে ভালো করতে হলে, আপনাকে Patient হতে হবে। বর্তমানে এমন সুযোগ নেই যে, দুয়েকটা কাজ করে দুই-তিন মাস ফেলে রাখলেও আপনার ওয়েবসাইটটা ভালো ফলাফল দেবে।
অনেক সময় এমনও হয়, একটা সাইট থেকে ফার্স্ট ডলার বা ফার্স্ট ইনকাম হতে হতে এক থেকে দেড় বছর লেগে যায়। এজন্য আপনাকে মোটামুটি এরকম একটা টাইমফ্রেমের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে যে, ন্যূনতম এক বছরের আগে আপনার ভালো কিছু আসবে না সাইট থেকে।
যদি আপনি ভাবেন যে, আজকে ওয়েবসাইট খুলে তিন/চার মাসের মধ্যেই 100 ডলার কামানো শুরু করবেন, সেটা মোটেই সম্ভব না।
তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। কেউ কেউ হয়তো ৪/৫ মাসের মধ্যে অনেক ইনকাম করে ফেলে। এগুলো কিছুটা টেকনিক, কিছুটা ভাগ্যের ব্যাপার এবং কিছুটা মিরাকল। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব হয়না। এজন্য আপনি এক্সেপশনটাকে মিরাকল হিসেবে ধরে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেটা ঘটে সেটার জন্য প্রস্তুতি নিন।
আপনি যদি সবকিছু ভালো ভাবে করে আগান, তাহলে সাধারণত ১ / ১.৫ বছর লাগবে। যদি আরো ভালো কিছু টেকনিক ফলো করেন, ভাগ্য ভালো হয় তাহলে এর আগেও ভালো ইনকাম হতে পারে। আর যদি কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে যায়, তাহলে আরো সময় বেশি লাগতে পারে। এজন্য আপনার খেয়াল রাখতে হবে, আপনি ঠিক পথে হাঁটছেন কি-না। রাস্তা ভুল না হলে শিগগিরই ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
অনেকে Patient ব্যাপারটাকে অন্য ভাবে নেয়। ভাবে, যত যা-ই হোক আমি এই নিশটাকে ছাড়বো না। যদি এমন হয় যে, এক – দেড় বছর পার হয়ে যাবার পরেও, কোনো ট্রাফিক দেখছেন না, তেমন কোনো ইনকাম হচ্ছে না, তাহলে বুঝে নিতে হবে, আপনার নিশে কোনো ঝামেলা আছে, কন্টেন্টে ঝামেলা আছে অথবা আপনার কীওয়ার্ড রিসার্চে কোনো ঝামেলা আছে।
কোনো না কোনো সমস্যার কারণে আপনার সাইট আগাচ্ছে না। এক্ষেত্রে অতি Patient হয়ে জেদ ধরে এই নিশ নিয়ে বসে থাকলে হবে না। অন্য কোনো নিশে যেতে হবে। নতুন একটা প্রজেক্ট শুরু করতে হবে, যেখানে আপনি একদম শুরুর থেকে শুরু করবেন। আগের ভুল গুলো এখানে করবেন না।
সুতরাং Patience এর পাশাপাশি নিজের স্ট্র্যাটেজিটা বোঝাও একটা বড় গুণ। সেই অনুযায়ী স্টেপ চেঞ্জ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
মোটকথা, দেখতে হবে—
আপনি ধৈর্যশীল কি-না, আপনি যেটা নিয়ে কাজ করছেন সেটা ঠিক কি’না, যেভাবে কাজ করছেন সেই ধরনটা ঠিক কি-না।
ভুল যে করছেন এটা কীভাবে বুঝবেন তা নিয়ে অনেকের অনেক দুশ্চিন্তা থাকে। আপনি যদি নিয়মিত কাজের মধ্যে থাকেন, নিয়মিত শিখতে থাকেন, প্র্যাকটিস করতে থাকেন, তাহলে নিজের ভুল নিজেই ধরতে পারবেন। এছাড়াও আপনার যারা সহকর্মী আছে, যারা এই লাইনে কাজ করছে তাদের ফলো করতে পারেন, তাদের সাথে সখ্যতা রাখতে পারেন।
4. Diversified না হওয়া:
কোনো নির্দিষ্ট একটা সোর্সে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হওয়াটা হলো Diversified না হওয়া। যদি আপনি শুধু ট্রাফিকের জন্য শুধুমাত্র সার্চ ট্রাফিকের ওপর নির্ভরশীল হোন, অর্থাৎ শুধু সার্চ ইঞ্জিন থেকে যে ট্রাফিক আসে তার ওপর নির্ভরশীল হোন, তাহলে কোনো গুগল আপডেটে যদি কখনো আপনার সাইটটা ধরা খায় তাহলে রাতারাতি আপনার সাইটের ট্রাফিক একদম নেমে যাবে, আপনার কিছু করার থাকবে না।
কিন্তু আপনি সার্চ ট্রাফিকের পাশাপাশি যদি আরও কিছু ট্রাফিক সোর্চ বিল্ডআপ করার চেষ্টা করেন তাহলে গুগল ট্রাফিক পরে গেলেও আপনার একটা ব্যাকাপ থাকবে।
এজন্য আপনার নিশ সাইট বিল্ডআপ করার পাশাপাশি একটা বা দু’টো সোশ্যাল মিডিয়া সাইটেও আপনার নিশ সাইটের একাউন্ট বিল্ডআপ করা উচিত। হতে পারে, ফেসবুক, ইউটিউব, পিন্টারেস্ট বা যেকোনো কিছু।
এতে সার্চ ট্রাফিক কোনো কারণে নাই হলে গেলেও এসব সোশ্যাল ট্রাফিক আপনার ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে।
সিমিলারলি ইনকামের ক্ষেত্রেও Diversification এর ব্যাপারটা আসে। আপনি যদি শুধু অ্যামাজনের অ্যাফিলিয়েট করেই টাকা পয়সা ইনকাম করেন, পাশাপাশি আর কোনো ইনকাম সোর্স না থাকে তাহলে অ্যামাজন যদি কোনো কারণে কখনো তাদের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেয়, আপনার একদম মাঠে বসতে হবে।
এমনটা হয়েছিল ২০১৯ এর দিকে। তখন অ্যামাজন তাদের কমিশন কমিয়ে দিয়েছিলো। ১০% কমিশন কমিয়ে নিয়ে আসে ৩% এ। এমন আবারও যেকোনো সময় করতে পারে। আপনার ব্যাকাপ ইনকাম সোর্স না থাকলে অবস্থাটা কী হবে, একবার ভাবুন!
এজন্য মেক শিওর, আপনি এটলিস্ট ২/৩ টা জায়গা থেকে ইনকাম করছেন। দু’টো হলে হতে পারে অ্যাফিলিয়েট + অ্যাড এর কম্বিনেশন। তিনটা হলে হতে পারে অ্যাফিলিয়েট + অ্যাড + এমন কিছু যেটা আপনার নিশের সাথে যায়। যেমন- লিড জেনারেশন, স্পন্সর পোস্টসহ অনেক কিছু যা আপনার নিশের সাথে যায়।
অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। একটা অ্যাফিলিয়েটের ওপর নির্ভরশীল হবেন না। শুধু অ্যামাজনের ওপর নির্ভরশীল হলে যেকোনো সময় অ্যামাজন চলে যেতে পারে। তখন আপনার অবস্থা খুবই খারাপ হবে।
5. Bad Hosting :
Bad hosting doesn’t mean cheap hosting. চিপ হোস্টিংও অনেক সময় ভালো হয়। আপনি যদি বাজে কোনো হোস্টের সাথে থাকেন তাহলে আপনার অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। উচিত একটা ভালো হোস্টের সাথে থাকা।
ভালো হোস্ট মানেই যে অনেক দামী হতে হবে, তা না। আপনার জন্য রেকমেন্ডেশন থাকতে পারে- ” Name cheap “। এই হোস্টের সমস্যা খুব কম, সাপোর্ট খুব ভালো দেয়। এরপরে আপনার সাইট যখন ভালো একটা ইনকাম করবে, তখন আরো ভালো দামের একটা হোস্ট কিনতে পারেন। যেমন- WPS Hosting ।
একটা ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার আপনার সাইটের অর্ধেক টেকনিক্যাল প্রবলেমের চিন্তা দূর করে দিতে সক্ষম।
6.পর্যাপ্ত পরিমাণ কন্টেন্ট পাবলিশ না করা:
একটা পপুলার ইউটিউব চ্যানেল ” Income School ” একসময় বলতো, কমপক্ষে অন্তত ৩০টা কন্টেন্ট পাবলিশ করে তারপরে অপেক্ষা করা যথেষ্ট। তখনকার সময়ের জন্য এটা সত্যি হলেও এখন আর সেই সময়টা থেমে নেই।
এখন কমপক্ষে অন্তত ১০০ টা কন্টেন্ট না থাকলে গুগলের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অথরিটি পাবেন না। কন্টেন্ট পাবলিশ করে দম নেয়ার হলে কমপক্ষে ১০০/১৫০ কন্টেন্ট পাবলিশ করে দম নিন। যদি অন ওয়ে সাইট হয় তাহলে থামাথামির প্রশ্নই আসবে না। নিয়মিত পাবলিশ করতে থাকুন।
7. নিয়মিত কন্টেন্ট আপডেট না করা:
১০০/১৫০ কন্টেন্ট পাবলিশ করে দিনের পর দিন ফেলে রাখা উচিত না। সেগুলো কিছু দিন পর পর আপডেট করতে হবে। আপডেট না করলে পুরোনো কন্টেন্ট গুলো র্যাঙ্ক হারাবে, ট্রাফিক কমে যাওয়া সহ যাবতীয় সমস্যা দেখা দেবে।
এজন্য নিয়মিত কন্টেন্ট পাবলিশ করার পাশাপাশি নিয়মিত কন্টেন্ট আপডেট করার রুটিনও করতে হবে। হয়ত প্রতিদিন একটা করে আপডেট করলেন। এতে আপনার পুরোনো কন্টেন্ট থেকেও অনেক লাভজনক ইনকাম হবে।
পুরোনো কন্টেন্ট আপডেট করা নিয়ে বিস্তারিত জানতে Writer’s Motion এর ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পারেন। অনেক ভিডিয়ো পেয়ে যাবেন, যা আপনাকে কন্টেন্ট আপডেট করতে সাহায্য করবে।
এই সাতটি ভুল থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখলে আশা করা যায় আপনার নিশ সাইটটি ভালো থাকবে।