পুরাতন কন্টেন্ট আপডেট করার সময় যে ৮ কাজ করতেই হবে!

বর্তমান সময়ে পুরাতন কন্টেন্ট আপডেট করাটা ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  অনেকেই আছেন যে, তিন-চার বছর ধরে ব্লগিং করছেন এবং তিন থেকে চারশো মত পোস্ট ও আছে। কিন্তু কখনোই আপডেট করা হয়নি। একদম পড়ে আছে। 

এই পুরাতন কন্টেন্ট পড়ে থাকাটা একটা সমস্যা।  এই পড়ে থাকা পোস্ট গুলো গুগল তেমন গুরুত্ব দেয় না। দিনশেষে, আপনার সাইটের জন্য এটা খুবই খারাপ একটা অবস্থা হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য পুরাতন কন্টেন্ট আপডেট করা উচিত এবং আপডেট করার সময় কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা উচিত।  

পুরাতন কন্টেন্ট আপডেট করার সময় যা যা করা উচিত :

1.Improve Readability :

একটা কন্টেন্ট আপডেট করতে গেলে প্রথমেই দেখবেন, আর্টিকেলটা পড়তে আরাম কি-না, খুব সহজে পড়া যাচ্ছে কি-না।  যদি না যায় তাহলে কিছু স্টেপ ফলো করতে হবে। যেমন- 

  • ফন্ট সাইজ খুব ছোট থাকলে সেটা আপডেট করে ফেলুন। অন্তত 16-18 Pixel Font Size ব্যবহার করা উচিত। এতে মোবাইলেও সুন্দর করে পড়া যায় এবং ডেস্কটপেও বেশ ভালো করেই পড়া যাবে। 
  • প্যারাগ্রাফ বড় থাকলে ছোট করে ফেলুন। বড় প্যারাগ্রাফ পড়তে আরামদায়ক হয়না। অনেক বড় হওয়ায় পাঠক খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং বিরক্ত হতে পারেন। 

মোবাইলে বড় প্যারাগ্রাফ পড়া বেশ কঠিন। এজন্য দুই-তিন বাক্যের বেশি একটা প্যারাগ্রাফে না রাখাই ভালো। 

  • বিভিন্নরকম  Blocks ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনি WordPress এ Gutenberg ব্যবহার করেন তাহলে প্যারাগ্রাফ, ইমেজ, হেডিং ছাড়াও অনেক Blocks পাবেন। 

এক্ষেত্রে Quote Block বেশ উপকারী। এই ব্লকটা যে শুধু Quote এর বেলাই ব্যবহার করতে হবে, তা-না। যেকোনো ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট বা লাইন বসিয়ে দিতে পারেন Quote Block এ! এতে আর্টিকেল দেখতে সুন্দর হয়। 

  • বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করতে পারেন। 

বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার, নাম্বারিং ইত্যাদি আর্টিকেলের Readability বাড়ায়। 

  • একটা Table Of Content রাখতে পারেন। এর জন্য অনেক প্লাগইন আছে। একটা প্লাগইন ব্যবহার করলেই হবে।  

এই ব্যাপার গুলো মেইনটেইন করলে আপনার ব্লগপোস্টের Readability নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ থাকবে না। 

2.Image এর ব্যবহার :

এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো- নিজের তোলা ছবি ব্যবহার করা। যদি আপনি কফি মেশিন নিয়ে কথা বলতে চান তাহলে আগে এনশিওর করতে হবে যে, আপনার বাসায় কফি মেশিনটা আছে। আর্টিকেল লেখার সময় নিজের কফি মেশিনের একটা ছবি তুলে ব্যবহার করলেন। এরচেয়ে ছবি ব্যবহারের ভালো উপায় আর হয়না। 

যদি এমন হয় যে, আপনার নিজের কাছে প্রোডাক্টটা নেই— তাহলে এমন কাওকে খুঁজে বের করুন যিনি প্রোডাক্টটা ব্যবহার করছেন। তার কাছ থেকে, তার অনুমতি নিয়ে ছবি এনে সেটা ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। 

পরিচিত কেউ না থাকলে- ঐ প্রোডাক্ট রিলেটেড ফেসবুক গ্রুপে, সাবরেডিট ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে ঢুঁ মেরে সেখানে প্রোডাক্টের ছবি চেয়ে পোস্ট করতে পারেন। 

অধিকাংশ সময়ই ভালো রেজাল্ট পাবেন। এতে আপনার পয়সাও খরচ করতে হবে না।  যদি সম্ভব হয় – যার কাছ থেকে ছবিটা পেয়েছেন, ব্লগপোস্টে ছবি অ্যাটাচ করার সময় নিচে তাকে একটা ক্রেডিট দিয়ে দেবেন। 

এভাবেও ছবি না পেলে স্টক ফটো অপশন ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে দুটো অপশন আছে। 

  1. ফ্রী।
  2. প্রিমিয়াম।

ফ্রী অপশনের থেকে প্রিমিয়াম অপশন বেটার। কারণ, প্রিমিয়াম ফটো ব্যবহার করতে কিছু টাকা-পয়সা লাগে। যেটা দিয়ে সবাই এই প্রিমিয়াম ফটো ব্যবহার করতে পারে না। যদি আপনার সমস্যা থাকে, আপনি ফ্রী ফটো ব্যবহার করতে পারেন। 

কিন্তু, ফ্রী ফটো যেহেতু সবার জন্য ফ্রী সেহেতু দেখা যাবে যে আপনি যে ছবিটা একটা ব্লগে ব্যবহার করবেন বলে সিলেক্ট করেছেন, সেটা আপনার আগে আরো পাঁচশ ব্লগপোস্টে ব্যবহৃত হয়েছে।  

এজন্য এমন ফ্রী ছবি গুলো কোনো একস্ট্রা ভ্যালু প্রোভাইড করবে না। তাই কিছু টাকা পয়সা খরচ করে হলেও প্রিমিয়াম ছবি ব্যবহার করা উচিত। 

3.Relevant Video Embed করা:

আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে পোস্টে লিখবেন, চেষ্টা করবেন সেই প্রোডাক্ট নিয়ে ইউটিউবে একটা ভিডিয়ো বানাতে। যে ভিডিয়োটা বানাবেন, সেটার লিংকটা ইউটিউবের ডেসক্রিপশন বক্সে দিয়ে দেবেন। আবার, ইউটিউব ভিডিয়োর লিংকটা ব্লগপোস্টে Embed করে দেবেন। 

যদি নিজে ভিডিয়ো বানাতে না পারেন তাহলে অন্য কারো বানানো ভিডিয়ো Embed করবেন। কিন্তু ভিডিয়োটা Relevant হতে হবে। 

4.Internal Link করা:

পুরোনো পোস্ট আপডেট করার ক্ষেত্রে ইন্টারনাল লিংক করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা স্টেপ। এক্ষেত্রে, আপনার সাইট বেশ বড় হলে ম্যানুয়ালি ইন্টারনাল লিংক করাটা কষ্টকর হবে। এ বেলায় ইন্টারনাল লিংক করার জন্য প্লাগইন ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- Link Whisper, Link C ইত্যাদি।  

Link Whisper এর দামটা একটু বেশি। তুলনামূলক LinkC এর দামটা কম। আর খরচ করতে না চাইলে Writers Motion এর WordPress Management Service টা নিতে পারেন। এখানে অনেক প্লাগইন ফ্রি-তে পাবেন। 

যে আর্টিকেলটা আপডেট করছেন, ওই আর্টিকেল থেকে অন্যান্য আর্টিকেলে কি কি ইন্টারনাল লিংক করা যায় সেটা বের করতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য আর্টিকেল থেকে আপডেট করা আর্টিকেলে কি কি ইন্টারনাল লিংক করা যায় সেটা বের করতে হবে । 

5.আর্টিকেল বড় করা:

আর্টিকেলে আরো কোনো ইনফরমেশন যুক্ত করা যায় কি-না, কোনো নতুন সাব হেডিং যুক্ত করা যায় কি-না এগুলো খুঁজে বের করবেন।  

আপনার আর্টিকেলের মূল কী-ওয়ার্ডটা আরেকবার রিসার্চ করবেন। গুগলে সার্চ করে দেখবেন, পিপল অলসো আস্ক এ কি কি কোশ্চেন আসছে, সাজেশন বারে কি আসছে। 

এখান থেকে আপনার আর্টিকেলের সাথে রেলেভেন্ট,  গুরুত্বপূর্ণ কোনো নতুন তথ্য পেলে টুকে রাখবেন। পোস্ট আপডেট করার সময় সেটা অ্যাটাচ করে দেবেন। এতে আপনার আর্টিকেল বেশি কী-ওয়ার্ডের জন্য র‌্যাংক করবে। 

6.FAQ Schema যুক্ত করা: 

এটা Frequently Ask Question এর মতই। শুধু এটা একটু স্কেমা আকারে সাজানো থাকবে। এটা ব্যবহারের জন্য প্লাগইন ব্যবহার করতে হবে। এখানেই পেয়ে যাবেন। 

People Also Ask Question থেকে যে কোশ্চেন গুলোর উত্তর খানিকটা শর্ট, সেগুলো FAQ Schema তে যুক্ত করে দেবেন। এছাড়াও, আপনার আর্টিকেলে যদি কোনো সাব হেডিংয়ের স্বল্প বর্ণনা থাকে, সেটাও যুক্ত করে দিতে পারেন। 

এরকম 4-5 টা FAQ দেয়ার চেষ্টা করবেন। এতে গুগলের সার্চ রেজাল্টে আর্টিকেলটা আসার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। 

7.Naturally Back link পাওয়ার চেষ্টা :

খুঁজে দেখুন, আপনার আর্টিকেলে এমন কিছু কী অ্যাড করা যায় কি-না যেটা আপনাকে ন্যাচারালি ব্যাকলিংক এনে দেবে।  

এক্ষেত্রে আর্টিকেলে টেবিল যোগ করা যায় কি-না।  ইউনিক তথ্যসমৃদ্ধ একটা টেবিল। একটু কষ্টসাধ্য।  ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। তবুও এটা করার ট্রাই করুন। কারণ, এই কাজটা সবাই করবে না। যেটা কেউ করে না সহজে, সেটা যদি আপনি করতে পারেন তাহলে আপনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন অবশ্যই। 

আবার, কোনো সোশ্যাল প্লাটফর্মে পোল ক্রিয়েট করে সেটার ইনফরমেশন আর্টিকেলে যুক্ত করতে পারেন। যেমন, কোনো চা কফি রিলেটেড ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করলেন যে— চা ভালো না-কি কফি?

লোকজন তো ভোট দেবে। সেটার স্ক্রিনশট আপনার চা-কফি রিলেটেড ব্লগপোস্টে যুক্ত করতে পারেন।  এই কাজটা কিন্তু বাকী দশজন করবে না। আপনি করলে সেটা আপনার রিডারদের একটা ইউনিক ভ্যালু দেবে। যার কারণে আপনি ন্যাচারাল ব্যাকলিংক পাবেন। 

এছাড়াও কোনো ইউনিক স্ট্যাটিস্টিক্স, ইউনিক ফ্যাক্ট ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। এগুলো খোঁজা একটু কঠিন। কিন্তু এটা সহজ করতে পারে AI।  এক্ষেত্রে, Koala AI Tool এর Koala chat এর একটা অপশন আছে — Real Time।   

এটা অন করে, কিছু লিখে দিতে বললে ও আপনাকে সোর্স সহ ইনফরমেশন লিখে দেবে। এখান থেকে ফ্যাক্ট পাবার পরে সেটা সরাসরি আর্টিকেলে বসিয়ে দেবেন না । 

ওর দেয়া ফ্যাক্টের সাথে যুক্ত সোর্সে গিয়ে ঘেঁটে দেখুন, ফ্যাক্টটা কতখানি অথেনটিক। যদি ঠিক থাকে তাহলে ওই ফ্যাক্টটা আপনি আপনার মত করে লিখে তারপর আর্টিকেলে যোগ করবেন। 

এই ছোটোখাটো ব্যাপাট গুলো আপনার আর্টিকেলকে স্ট্যান্ড আউট করবে। 

8.Title আপডেট করা:

আর্টিকেলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আর্টিকেলের টাইটেল! একটা টাইটেল আপনার আর্টিকেলের আকর্ষণীয়তা যেমন বাড়াতে পারে, তেমনি কমাতেও পারে। 

সুতরাং দেখুন আপনার আর্টিকেলের টাইটেলটা বিরক্তিকর এক ধাঁচের কি-না।  একটু রসকষ মিশিয়ে স্পাইসি বানাতে হলে, বানান। যাতে ভিজিটর আকৃষ্ট হয়। 

আপনি না পারলে, AI এর হেল্প নিতে পারেন। ChatBOT এর কাছে যান। AI আপনাকে যে আইডিয়া গুলো দেবে সেগুলো একটু মডিফাই করে, জোড়াতালি লাগিয়ে নিজের মত একটা হট & স্পাইসি টাইটেল বানিয়ে ফেলুন। 

টাইটেলটা খুব বেশি লম্বা করবেন না। 60-65 ক্যারেক্টরের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবেন।  কারণ, AI যে আইডিয়া গুলো দেয় সেগুলো অনেক লম্বা হয়। এত লম্বা টাইটেল দেয়া উচিত না। ছোট কিন্তু ইন্টারেস্টিং টাইটেল আপনার আর্টিকেলের CTR বাড়িয়ে দিতে পারে। 

বর্তমান সময়ে টিকতে হলে পুরাতন কন্টেন্ট আপডেট করার বিকল্প নেই এবং এই আটটা ব্যাপার ফলো করতে পারেন পুরাতন কন্টেন্ট আপডেট করার সময়!

Similar Posts