কঠিন কিছু নিশ, যেসব নিশ নিয়ে কাজ করা উচিত নয়!

কাজ করতে গেলে আমাদের সবার, বিশেষ করে বিগিনারদের মেনে চলতে হয় অনেক নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল। কম্পিটিশনের যুগে আপনি প্রথম পদক্ষেপেই যদি হোঁচট খান তাহলে জেতার সম্ভাবনা প্রথমেই হারিয়ে ফেলবেন৷

ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সম্পূর্ণ সত্যি। একটা ওয়েবসাইট ভালো পর্যায়ে পৌঁছাতে নিশ সিলেকশনে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এখানে এমন কিছু নিশ বা নিশের ক্যাটাগরি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলো নিয়ে কাজ করা বিপজ্জনক এবং বিগিনার হলে তো একদমই উচিত না।

Looking for more insights on Blogging? You may find this post valuable. ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যা প্রতিটি ব্লগারের ফলো করা উচিত! 

নিশ ভালো না-কি খারাপ— বুঝবো কীভাবে?

নিশ ভালো না-কি খারাপ— এটা চারটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখে বোঝা সম্ভব। চারটা বিষয় হচ্ছে,

1. আর্নিং ক্যাপাবিলিটি

নিশের আর্নিং ক্যাপাবিলিটি, এড ফ্রেন্ডলিনেস অর্থাৎ, নিশটি এড ফ্রেন্ডলি কি-না।  বর্তমানে ইনকামের একটা বড় অংশ আসে অ্যাডের মাধ্যমে। সো, এটা চিন্তা করে নিশ সিলেক্ট করা জরুরি।

2. অ্যাফিলিয়েট কমিশন।

আপনি যে নিশ নিয়ে কাজ করবেন,  ওই নিশ রিলেটেড প্রোডাক্টের প্রাইজ কেমন এটা দেখতে হবে। প্রোডাক্টের প্রাইজ যত বেশি, আপনার কমিশনও তত বেশি।

3. কম্পিটিভনেস।

আপনার নিশ কতটুকু কম্পিটিভ এটা দেখা প্রয়োজন। অনেক কম্পিটিভ হলে আগানো কঠিন। নতুনদের জন্য আরো কঠিন। তাই, নতুনদের এমন নিশ নিয়ে কাজ না করাই বেটার।

4. নিশটা YMYL রিলেটেড কি-না।

YMYL হচ্ছে – Your Money Your Life। অর্থাৎ, এমন নিশ যেগুলো হেল্থ রিলেটেড, মানি রিলেটেড ইত্যাদি।  আপনি যদি খুব এক্সপার্ট না হোন, তাহলে কারো স্বাস্থ্য নিয়ে আপনি কোনো মন্তব্য করতে পাারেন না। কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবে। মামুলি কারো কাছে না।

আপনি এক্সপার্ট না হয়ে কোনো রোগ, স্বাস্থ্য বা টাকা পয়সা জাতীয় সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে অনেক কনটেন্ট দিয়ে রাখলেন কিন্তু মানুষ আপনার দেয়া ইনফরমেশন পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো— সেটা কিন্তু মোটেই ভালো কথা নয়।

কিন্তু, যদি এমন হয় YMYL রিলেটেড নিশে E.A.T অর্থাৎ Expertise, Authoritiveness Andtrustworthiness আছে, তাহলে র‌্যাঙ্ক করা সম্ভব। 

মোটকথা, আপনার ওয়েবাসাইটে অথরিটি যত ভালো থাকবে র‌্যাঙ্ক করার চান্স তত বেশি।

এরপরেও বিভিন্ন ক্যাটাগরি আছে যে ক্যাটাগরির নিশ নিয়ে কাজ করা উচিত নয়। যেমন—

ভায়োলেন্স সম্পর্কিত নিশ:

আপনার যদি গোলাগুলি, যুদ্ধ ইত্যাদি ভায়োলেন্স সম্পর্কিত ওয়েবসাইট থাকে তাহলে কোনো এড নেটওয়ার্ক সাইটই চাইবে না আপনার ওয়েবাসাইটে সম্পৃক্ত হতে৷

কারণ, কেউ গোলাগুলি রিলেটেড কনটেন্টের খোঁজে এসে অবশ্যই সাবানের বিজ্ঞাপন দেখতে পছন্দ করবে না। ঠিক এরকমই, বিজ্ঞাপন দাতাও পছন্দ করবে না বিষয়টা। এড নেটওয়ার্ক সাইটগুলো সবসময়ই চায় এমন নিশের সাথে কাজ করতে যেখানে বড় পরিসরে কাজ করা যায় এবং কোনো বাঁধা বা বাধ্যবাধকতা না থাকে।

এমন নিশ কোন গুলো?

— হতে পারে- বন্দুক, রেসলিং, শিকার করা, বক্সিং, যেকোনো ভায়োলেন্স স্পোর্টস বা ফায়ার ওয়ার্ক ইত্যাদি!

Controversial Niche:

এসব নিশেও সাধারণত এড নেটওয়ার্কেরই প্রবলেম হয়।

আপনার ওয়েবাসাইটে যদি কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট হয় তাহলে কোনো এড নেটওয়ার্ক সাইট চাইবে না আপনার সাথে কাজ করতে। যেমন-

পলিটিকস

পলিটিকস এমন একটা টপিজ- যেটা নিয়ে আপনি চায়ের দোকানে ঝড় তুলতে পারলেও ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে কথা না বলাই বেটার। আর যেহেতু, আপনার কনটেন্ট গুলো হবে আমেরিকান অডিয়েন্সকে উদ্দেশ্য করে সেহেতু আপনাকে আমেরিকান পলিটিকস নিয়েই কথা বলতে হবে।

অ্যালকোহল

অ্যালকোহলকেও কন্ট্রোভার্সিয়াল নিশ হিসেবে ধরা হয়। এজন্য অ্যালকোহল নিশ নিয়ে একটা ট্রিকি কাজ করতে পারেন।  যেমন, বড় বড় যে রিহ্যাব সেন্টার গুলো আছে ওদের লিড জেনারেশন প্রোগ্রাম আছে।

আপনি এমন একটা ওয়েবসাইট বানালেন- যারা অ্যালকোহলিক, তারা এসে তাদের ইনফরমেশন দেবে আপনাকে এবং ওই ইনফরমেশন আপনি আবার কোনো রিহ্যাব সেন্টারে দেবেন। তখন ওই রিহ্যাব সেন্টার প্রতি লিডের জন্য, প্রতি ইনফরমেশনের জন্য আপনাকে টাকা দেবে। এই প্রক্রিয়াটাকে বলে লিড জেনারেশন প্রোগ্রাম। 

এতে রিহ্যাব সেন্টারের লাভ হলো- তারা কাস্টমার পাবে আপনার মাধ্যমে।  তাই তারা আপনাকে পে করবে।

এছাড়া অ্যালকোহল একটা কঠিন নিশ। এটা নিয়ে আগাতে হলে আপনাকে খুব ভালো করে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে আগাতে হবে।

টোবাকো

এটা যদিও অ্যালকোহলের মতই কিন্তু, এটার ক্ষেত্রে লিড জেনারেশন প্রোগ্রাম তেমন নেই বললেই চলে।  তবে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম থাকতে পারে।

Gambling

অনেকেই পছন্দ করে না Gambling ।  তাই এদিকে না যাওয়াই বেটার।

এডাল্ট সাবজেক্ট

পর্ণোগ্রাফী নিয়ে আপনি অবশ্যই কাজ করবেন না। একদমই উচিত হবে না।

ক্যানাবিস

ক্যানাবিস ব্যাপারটা অনেক জায়গায় অবৈধ আবার অনেক জায়গায় বৈধ। এটা নিয়ে অনেকে বাজে কথা বলে আবার অনেকে ভালোও বলে। এটা নিয়ে বড়সড় একটা কন্ট্রোভার্সি আছে, তাই এটা নিয়ে কাজ করা উচিত হবে না।

রিলিজিওন

কোনো ধর্মীয় ইনফরমেশন জানার জন্য সবাই চায় ফ্রী মাধ্যমে জানতে। আপনি যখন রিলিজিয়স ওয়েবসাইট মনিটাইজ করবেন এটা সবাই ভালো ভাবে নেবে না। সো, এদিকে না আগানোই ভালো।

LGBTQ

বাই সেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার বা লেসবিয়ান ইত্যাদি একটা সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করা অবশ্যই উচিত নয়। এ ব্যাপারে বিরাট কন্ট্রোভার্সি রয়েছে। 

YMYL

” Your Money, Youre Life ” জাতীয় নিশে সবকিছু ঠিক থাকলেও এর কম্পিটিশন অনেক বেশি। আপনি যদি একদম বিগিনার হোন তাহলে এদিকে না যাওয়াই ভালো।  কিন্তু, আপনি যদি এক্সপেরিয়েন্সড হোন, আপনার E.A.T ভালো থাকে এবং পাশাপাশি লং টার্ম চিন্তা ভাবনা থাকে- যেমন, আপনি এটা নিয়ে বেশ কিছু বছর কাজ করবেন আর শুধু ওয়েবসাইট না, একটা ব্র্যান্ডই দাঁড় করিয়ে ফেলবেন  তাহলে ভেবেচিন্তে আগাতে পারেন।

YMYL এর ভেতর যেসব নিশ আছে —

  • মেডিসিন বা ড্রাগস
  • বিভিন্ন ডিজিজ।
  • পার্সোনাল ফাইন্যান্স।
  • কুকিং অথবা রেসিপি। কুকিং / রেসিপি একদম সরাসরি YMYL ক্যাটাগরিতে না পরলেও এর সমস্যা হচ্ছে,  এর কম্পিটিশন অনেক হাই। আপনি যেকোনো রেসিপি সম্পর্কিত আর্টিকেল সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। তাই এটা নিয়ে আগানো একটু কঠিনই বটে!
  • বেবি কেয়ার। এটা খুবই ডেঞ্জারাস ব্যাপার। বাচ্চাদের খেলনা বা যেকোনো জিনিসপত্র নিয়ে আগাতে সমস্যা নেই কিন্তু বাচ্চাদের স্বাস্থ্য, হেলথ কেয়ার নিয়ে কাজ করা কঠিন কারণচ বিষয়টা খুবই সেনসিটিভ!
  • ডায়েট বা ওয়েট লস। অধিকাংশ মানুষই ওয়েট লস নিয়ে কাজ করে। খুবই কম্পিটিটিভ নিশ!

এমন নিশ যার প্রডাক্ট প্রাইস খুবই কম:

এমন নিশ নিয়ে কাজ করা উচিত, যে নিশ রিলেটেড প্রোডাক্টের প্রাইস কিছুটা বেশি। যাতে আপনি একটা ভালো কমিশন পেতে পারেন। কিন্তু, ধরুন বুক রিভিউ করলেন। একটা বইয়ের দাম দশ বা পনেরো ডলার হলে সেখান থেকে আপনি ৩%-৪% কমিশন পেলে কত ডলারই বা পাবেন!

সো, প্রোডাক্টের প্রাইস দেখে নিশ সিলেক্ট করুন। প্রোডাক্টের দাম অন্তত ২০ ডলারের ওপরে। এভারেজ ১০০ ডলারের কাছাকাছি হলে ভালো।

কিন্তু, সবক্ষেত্রেই যে ১০০ ডলারের কাছাকাছি প্রডাক্ট প্রাইস হতে হবে এমন নয়। আপনি যে নিশটা সিলেক্ট করেছেন, সেটার কিছু প্রোডাক্টের দাম ১০০ ডলার হোক আর কিছু ডলারের দাম ৩০ বা ৪০ ডলার হোক— সমস্যা নেই। 

Explore more about Blogging with this related post. ব্লগ পাবলিশ করার জন্য বেস্ট সময় কখন! 

এক্সপেন্সিভ প্রোডাক্ট রিলেটেড নিশ:

এমন নিশ – যার প্রোডাক্ট গুলো খুবই এক্সপেন্সিভ এমন সাধারণত অনলাইনে কেনা-বেচা খুবই কম হয়। হতে পারে- গাড়ি, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি।  তবে এমন নিশ দিয়ে অন্য ভাবে ইনকাম করা যায়, যেটা হচ্ছে — লিড জেনারেশন। 

অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে যেটা বলা হয়েছিল, তেমনই — ধরুন, আপনার একটা ইন্স্যুরেন্স সাইট আছে।  আপনি কার ইন্স্যুরেন্স দেন। সেক্ষেত্রে আপনি কোনো কার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাথে ডিল করলেন। আপনি তাদের লিড দিলেন তার বিনিময়ে তারা আপনাকে নির্দিষ্ট এমাউন্টের কিছু টাকা দিলো।

আপনার ওয়েবাসাইটে একটা কন্টাক্ট ফর্ম থাকবে। যারা কার ইন্স্যুরেন্সে ইন্টারেস্টেড তারা ওই ফর্মে তাদের ইনফরমেশন দেবে। আপনি তাদের ইনফরমেশন গুলো কার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করবেন।

বলা যায়, এটা খুবই পপুলার একটা মেথড!

এমন নিশ, যেটার পরিধি খুবই ছোট:

এমন নিশ, যার প্রতি মানুষের ইন্টারেস্ট খুবই কম — এমন নিশ সিলেক্ট করা যাবে না।

এমন নিশ সিলেক্ট করুন যেটা নিয়ে অন্তত ১০০ আর্টিকেল লিখতে পারবেন। কারণ, আপনি আপনার সাইটটা যত ভারী করতে পারবেন ততই ভালো। 

মোটকথা, আপনি যা-ই নিয়ে কাজ করুন না কেন সব দিক বিবেচনা করে কাজ করুন। প্রথম প্রথম যদি মাছের কাটা বেছে খেতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে কাঁটা গলায় বাধার সম্ভাবনা থাকবেই না!

Similar Posts