২০২৩ সালে যেভাবে ব্লগিং করলে ইনকাম নেমে যাওয়ার রিস্ক কমবে!

একটা ব্যাপার সার্বজনীন স্বীকৃত, যে— যারা ব্লগার আছেন তাদের অবস্থা ২০২০ সাল থেকেই খারাপের দিকেই যাচ্ছে দিনদিন । বিভিন্ন কারণে এই অবনতিটা হয়েছে। যেমন- ২০২০ সালে অ্যামাজন তাদের কমিশন কেটে দিলো, করোনা আসলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হলো ইত্যাদি। একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এছাড়াও- ২০২২ সালে গুগল পুরোটা সময় ধরেই একটার পর একটা আপডেট দিয়ে গিয়েছে। প্রতিটা আপডেটেই প্রতিটা সাইটের কোনো না কোনো ক্ষতি হয়েছেই। পাশাপাশি ট্রাফিকও একদম নেমে গিয়েছে। 

Looking for more insights on Blogging? You may find this post valuable. ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যা প্রতিটি ব্লগারের ফলো করা উচিত! 

২০২৩ সালে এই বিপদ গুলো থেকে বেঁচে থাকবার উপায় কি? 

প্রথমে আমরা কথা বলব, কিভাবে আপনি এসব রিস্ক মিনিমাইজ করতে পারেন। 

যদি আর্নিং দিয়ে শুরু করি—

ধরুন, আপনার একটা ব্লগ সাইট আছে। ওই সাইটের আর্নিং সোর্স যদি কেবলমাত্র একটা হয় তাহলে আপনার সাইটটা রিস্কের মধ্যে আছে। 

বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্লগারের আর্নিং সোর্স থাকে কেবল একটা- অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। যদি আপনার ব্লগ শুধু অ্যাফিলিয়েট থেকেই ইনকাম করে তাহলে বিপদ সামনেই থাকে। কারণ, আপনি যার অ্যাফিলিয়েট করছেন সে আপনাকে যেকোনো সময় বাদ দিতে পারে। সে বাদ দিলে আপনার হাতে তো কোনো অপশন নেই। তখন আপনার ওয়েবসাইটের আর্নিং একদম শূণ্যের  ঘরে চলে যাবে। 

আরো ভেঙে বললে- আপনি হয়ত অ্যামাজনের অ্যাফিলিয়েট করছেন। এখন অ্যামাজন সিদ্ধান্ত নিলো তারা কোনো অ্যাফিলিয়েট রাখবে না। 

তাহলে কি হবে? 

আপনার ইনকাম সোর্সটাই বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে যদি আপনার একটা ইনকাম সোর্স থাকে, ২০২৩ সালে এসে চেষ্টা করতে হবে সেটাকে দ্বিগুণ করার। অর্থাৎ, ইনকাম সোর্স বাড়াতে হবে। 

একটা ইনকাম সোর্স থাকলে, আরো একটা খুঁজুন।  দু’টো ইনকাম সোর্স রাখাটা অপরিহার্য বানিয়ে ফেলুন। 

দু’টো থাকলে, আরো একটা যুক্ত করে তিনটা সোর্স বানিয়ে ফেলুন৷ যাতে আপনার আতঙ্কিত থাকতে না হয়।

তাহলে দু’টো ইনকাম সোর্স কিভাবে বানাবেন? 

দু’টো ইনকাম সোর্স বানানো খুবই সহজ। যদি এক নাম্বার ইনকাম সোর্স হিসেবে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকেন তাহলে দু’নাম্বার ইনকাম সোর্স হিসেবে Display Ad Network রাখতে পারেন। 

এই সময়ে অনেক Display Ad Network পাবেন। যেমন- Mediavine, Ezoic,  AdThrive ইত্যাদি।  এরমধ্যে অনেক গুলোই আছে প্রিমিয়াম। সেক্ষেত্রে Ezoic এ যাওয়া সহজ। আপনি চাইলেই Ezoic এ যেতে পারেন।

এতে করে আপনার মনিটাইজেশনটা একটা উৎসের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে কয়েকটা ভাগে ভাগ হয়ে গেলো। এজন্য যদি আপনার কোনো একটা সোর্স বন্ধও হয়ে যায় তাহলেও আপনাকে একদম পথে বসে যেতে হবে না। আপনাকে হেল্প করার জন্য আরো সোর্স থাকবে। 

এবার ধরুন, আপনার দু’টো ইনকাম সোর্স আছে— Ad আর Affiliate।  তাহলে আপনাকে টার্গেট করতে হবে, আরো একটা ইনকাম সোর্স যুক্ত করে তিনটা সোর্স বানানো। এখন, তিন নাম্বার সোর্সটা কি হতে পারে? 

তিন নাম্বার সোর্সটা একটু কঠিন করে ভাবতে হবে, আগের গুলোর চেয়ে। হতে পারে- কোনো ইনফরমেটিভ কোর্স বানিয়ে সেল করা, লিড জেনারেশন করা,  DropShipping করা ইত্যাদি সহ অনেক অনেক উপায় আছে। আপনাকে চিন্তা ভাবনা করে দেখতে হবে যে, কোনটা আপনার সাইটের সাথে ঠিক যায়। 

যদিও তিন নাম্বার আর্নিং সোর্সটা আনা একটু কঠিন। কিন্তু, আপনি চাইলে এবং চেষ্টা করলে কোনো কিছুই অসম্ভব না। এটা করতে পারলে আপনার ব্লগের ইনকাম লেভেল কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।  

আরেকটা ব্যাপার হলো- আপনি যদি শুধু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ই করতে চান— সেক্ষেত্রে যদি আপনার খালি একটা সোর্সই থাকে, আপনি কেবল একটা প্ল্যাটফর্মের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংই করে থাকেন তাহলেও আপনি যথেষ্ট রিস্ক নিয়ে চলছেন। 

এজন্য, প্রথমেই আর্নিং সোর্স দু’টো করে ফেলুন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে Display Ad Network যুক্ত করুন৷ এরপরে আপনি আরো অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করুন। শুধু অ্যামাজনের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং না করে আরো অনেক ধরনের প্ল্যাটফর্ম আছে, যাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়— তাদের খুঁজে বের করুন। 

অর্থাৎ, আর্নিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো ভাবেই একটা সোর্সের ওপর নির্ভরশীল থাকবেন না। যথাসম্ভব চেষ্টা করুন আর্নিং সোর্সটাকে ডাইভার্সিফাই করতে। এতে আপনার রিস্কও কমবে এবং আর্নিং লেভেল ও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। 

একটা মজার ব্যাপার হলো—

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই Ad থেকে ইনকাম করা বলতে মানুষজন বোঝে যে- অটোমেটিক ভাবে Adsense।  আসলে Adsense হলো- সবচেয়ে লো টিয়ারের একটা Ad Platform। যেখান থেকে আপনি Ad Based ইনকাম করতে পারবেন। 

Explore more about Blogging with this related post. ব্লগ পাবলিশ করার জন্য বেস্ট সময় কখন! 

তবে, এরচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি সাইটের ট্রাফিক বাড়িয়ে Ezoic এ চলে যেতে পারেন। কারণ, Ezoic আপনাকে Adsense এর চেয়ে বেশি ইনকাম করতে সাহায্য করবে। 

এজন্য, Ezoic ই যে বেস্ট তা-না। এরমধ্যে সবচেয়ে বেস্ট হলো- Mediavine, AdThrive ইত্যাদি।  এসবে যেতে হলে একটু কাঠখড় পোড়াতে হয়। যেমন- Mediavine এ যেতে হলে কমপক্ষে 50,000 সেশন আর AdThribe এ যেতে হলে 1,00,000 এর মত সেশন বা পেইজ ভিউ লাগে প্রতিমাসে! 

এজন্য একদম নতুম হলে তো এসব ট্রাই করা অনেকটাই অসম্ভব।  তাই প্রথমদিকে Adsense এ যান অনেকে। এক্ষেত্রে Adsense  এ না গিয়ে প্রথমদিকে Ezoic এ যাওয়া উচিত। 

ট্রাফিকের ব্যাপারে-

অধিকাংশ ব্লগিং সাইটের মেজর ট্রাফিক আসে গুগল থেকে। এ কারণে গুগল আপডেট আসলে ব্লগারদের একদম খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। ৮০% – ৯০% ট্রাফিকই গুগল থেকে এসে থাকে সেক্ষেত্রে ২০২৩ এ এসে চিন্তা করতে হবে ইনকামের মত ট্রাফিক সোর্সও কিভাবে ডাইভার্সিফাই করতে পারেন। 

ট্রাফিক সোর্স ডাইভার্সিফাই করার একটা বেস্ট পন্থা হচ্ছে একটা ইউটিউব চ্যানেল ক্রিয়েট করা। ইউটিউব চ্যানেল খুলে রেগুলার ভিডিয়ো দিলে সেখানে একটা ভালো পরিমাণের অডিয়েন্স পাবেন। ওই অডিয়েন্সকে আপনি আপনার ব্লগে নিতে পারবেন, আবার ব্লগের অডিয়েন্সলে ইউটিউব চ্যানেলে নিতে পারবেন। 

আবার, এই ইউটিউব চ্যানেলের ফলে — ভবিষ্যতে যদি কোনো ইনফরমেটিভ কোর্স চালু করেন তাহলে অনেক হেল্প পাবেন। 

এ কারণে, ২০২৩ সালে ব্লগারদের ” আমি শুধু ব্লগিংই করব ” এমন চিন্তাভাবনা থেকে সড়ে আসতে হবে। পাশাপাশি একটু ইউটিউবের দিকে আগাতে হবে। মোটকথা, রিস্ক কমানোর জন্য নিজের নিশ সাইটের ওপর একটা ইউটিউব চ্যানেল ক্রিয়েট করা জরুরি বলা যায়। 

আরো এডভান্স কিছু ভাবলে— যদি আপনার ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল দু’টোই থেকে থাকে তাহলে, আরো একটা ট্রাফিক সোর্স বাড়াতে পারেন। হতে পারে- ইন্সটাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি।  যেটাই হোক না কেন, আপনার নিশ সাইটের সাথে যায়— এমন কোনো পন্থাই হাত ছাড়া করা উচিত হবে না। 

অর্থাৎ, আপনার নিশ রিলেটেড অডিয়েন্সের আনাগোনা যেসব প্ল্যাটফর্মে বেশি সেখানে বিচরণ করুন। কোনোমতেই অডিয়েন্স হাতছাড়া করা যাবে না।  

এছাড়াও- 

যদি আপনার মোটামুটি ওয়েল ডাইভার্সিফাইড একটা ব্লগ থাকে এবং প্রতিমাসে সেখান থেকে 1,000 ডলার বা তার থেকে বেশি ইনকাম করে থাকেন তাহলে আপনার উচিত ২০২৩ সালে আরেকটা ব্লগ ক্রিয়েট করা। 

কোনো কারণে যদি আপনার প্রথম ব্লগসাইটটা ডাউন হয় বা কোনো সমস্যা হয় বা ট্রাফিক কমে যায় — তাহলে আপনার দ্বিতীয় ব্লগসাইটটা আপনাকে হেল্প করার জন্য থাকবে। এক্ষেত্রে আপনার ইনকাম দু’টো ব্লগ থেকে হবে আর রিস্কও কমে যাবে। 

এরকম কিছু কিছু কাজ করে এক্সটার্নাল কিছু রিস্ক কমানো সম্ভব। 

Similar Posts