একটা সাইট বানাবো, না-কি অনেক গুলো?

ওয়েবসাইট বানাতে গেলে অনেকের মাথায় প্রশ্ন আসে যে, একটা ওয়েবসাইট বানাবো নাকি একটা পোর্টফলিও বানাবো যেখানে অনেকগুলো ওয়েবসাইট থাকবে!

অনেকগুলো ওয়েবসাইট বানাবো কি-না এই ধরনের প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই আছে। বিশেষ করে যাদের মধ্যে শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম কাজ করে। 

শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম টা কি?

ধরুন, আপনি একটা ওয়েবসাইট বানালেন। তারপর নিশ সিলেক্ট করে, কিওয়ার্ড রিসার্চ করে, পুরো দমে আর্টিকেল লেখা শুরু করলেন।

১০ থেকে ১৫ টা আর্টিকেল লেখার পরে আপনার মনে হল যে, না এটা আর কন্টিনিউ করতে পারবো না। আমার নতুন একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে। আমার সেটা নিয়ে কাজ করা দরকার। 

অর্থাৎ বলা যায় যে, আপনি কোনো একটা ওয়েবসাইট নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করতে পারেন না। আপনার মনে হয় যে, অন্য কোন নিশ নিয়ে কাজ করা দরকার অন্য কোনো ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করা দরকার। এমন অস্থিরতা আপনার মধ্যে থাকলে ধরে নিতে হবে আপনার শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম রয়েছে।

এর ফলে যেটা হয়, কোনো কাজই  আপনি ভালোভাবে শেষ করতে পারবেন না। আপনি নতুন নতুন শাইনি অবজেক্ট দেখা শুরু করবেন। বারবার এক কাজ থেকে আরেক কাজে লাফ দেবেন এতে আপনার কোন কাজই ঠিকঠাক মতো করা হবে না। 

Discover more interesting content on Blogging by reading this post. ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যা প্রতিটি ব্লগারের ফলো করা উচিত! 

এক্ষেত্রে আপনার কি করা উচিত?

আপনার যদি শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম থেকেও থাকে, তাহলেও কি আপনার একটা ওয়েবসাইট থাকা উচিত? না-কি  অনেকগুলো ওয়েবসাইট রাখা উচিত?

দু’টো অপশন নিয়েই সমান সমান যুক্তি উপস্থিত আছে। আমরা দু’টো অপশন নিয়েই কথা বলব। 

প্রথমত—  বর্তমানে আপনি যদি বড় বড় নিশ সাইট Owner দের দেখেন, তাহলে দেখবেন যে তাদের ম্যাক্সিমাম এরই একটা মাত্র ওয়েবসাইট আছে। 

তারা ওই একটা ওয়েবসাইটেই তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগটা দেয়, ফুল ফোকাসটা তাদের ওই একটা ওয়েবসাইটকে ঘিরেই থাকে এবং ওই ওয়েবসাইটটা থেকেই তাদের বিজনেসে মূল রেভিনিউ টা আসে।

কিন্তু, এমন অনেকগুলো ওয়েবসাইটের বদলে—

একটা ওয়েবসাইট থাকলে আসলে কি লাভ?

ধরুন আপনি সপ্তাহে 10 ঘণ্টা আপনার নিশ সাইটের পেছনে দিয়ে থাকেন। এখন আপনার যদি পাঁচটা নিশ সাইট থাকে

তাহলে হিসেব করে দেখেন, আপনি প্রত্যেকটা নিজ সাইটের পেছনে মাত্র দুই ঘন্টা করে সময় দিতে পারছেন। 

কিন্তু, আপনার যদি পাঁচটা ওয়েবসাইটের বদলে একটা মাত্র ওয়েবসাইট থাকতো তাহলে আপনি সপ্তাহে ১০ ঘণ্টার পুরোটাই ওই একটা ওয়েবসাইটের পেছনে খরচ করতে পারতেন।

আবার, আপনার দুইটা সাইট আছে। একটা ওয়েবসাইটের পেছনে আপনি দুই ঘন্টা করে সময় দিচ্ছেন সপ্তাহে আর একটা ওয়েবসাইটের পেছনে দশ ঘন্টা করে সময় দিচ্ছেন। পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন যে, কোনটা বেশি আগাচ্ছে। অবশ্যই যেটার পেছনে সময় ও শ্রম বেশি দিচ্ছেন সেটা!

এজন্য আপনার পাঁচটা ওয়েবসাইটের বদলে যদি একটা ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনার ওই একটা ওয়েবসাইট বেশি ভালো আগাবে, ভালো ফলাফল দেবে এবং ওইখান থেকে আপনি থিউরিটিক্যালি ভালো একটা ইনকাম করতে পারবেন, আপনার ট্রাফিক ও ভালো হবে।

এছাড়াও—

আপনার তিনটা ওয়েবসাইট আছে এবং প্রত্যেকটা ওয়েবসাইটের জন্য আপনি দুইজন করে রাইটার রাখলেন। টোটাল ছয় জন রাইটার আপনি হায়ার করলেন। 

কিন্তু, আপনি যদি তিনটা ওয়েবসাইট না করে একটা ওয়েবসাইট করতেন এবং ওই একটা ওয়েবসাইটের জন্যই ছয় জন রাইটার হায়ার করতেন তাহলে আপনার একটা ওয়েবসাইটেই তিনগুণ বেশি কাজ হতো।

এই হলো একটা ওয়েবসাইট রাখার সুবিধা যেটা করলে আপনার ওয়েবসাইট টা ভালো গ্রো করবে এবং আপনার ইনকাম ভালো হবে। পাশাপাশি এই ওয়েবসাইটটাকে আপনি একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়া করাতে পারবেন।

মানুষ সাধারণত নিশ সাইটে ইনকাম কিভাবে করে দুইভাবে।  প্রথমতঃ এফিলিয়েট মার্কেটিং করে এবং দ্বিতীয়তঃ এডভারটাইজিং করে। 

এগুলো একটা কমন প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া এবং এগুলো থেকে আপনি একটা সার্টেইন পর্যায়ে ইনকাম করতে পারবেন। কিন্তু, আপনি অনেকের বেলায় এমন শুনবেন যে তারা নিশ সাইট থেকে এত ইনকাম করে যেটা কল্পনার বাইরে। 

এই কল্পনার বাইরের কাজগুলো হয়, যখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়া করাতে পারবেন। শুধু অ্যাডভার্টাইজিং আর এফলিয়েট মার্কেটিং এর উপর ডিপেন্ড না করে আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আরো অনেক কিছু করা শিখবেন এবং করবেন। 

যেমন আপনি আরো মনিটাইজেশন স্ট্রিমিং আনলেন যার জন্য আপনাকে আরও একটিভলি কাজ করতে হবে। যেমন আপনি একটা ইনফরমেটিভ কোর্স সেল করতে পারেন, প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন, ইমেইল মার্কেটিং করতে পারেন ইত্যাদি। 

এই কাজগুলো টিপিক্যাল নিশ সাইটে করা যায় না। এজন্য একটা বড় ওয়েবসাইট লাগে। সো, এমন কিছু করতে গেলে আপনার একটা ওয়েবসাইটের পেছনে সময় দিতে হবে, সম্পূর্ণ মনোযোগ টা দিতে হবে। তাহলে আপনি এমন কল্পনার বাইরে গিয়ে একটা ইনকাম করতে পারবেন। 

একটা ওয়েবসাইট রাখার খারাপ দিক:

এ তো গেল একটা ওয়েবসাইটের ভালো ভালো দিক। কিন্তু, এত ভালো দিক থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেকটা জিনিসেরই একটা খারাপ দিক থাকে। একটা ওয়েবসাইট রাখার খারাপ দিক হচ্ছে, আপনার যদি একটা মাত্র ওয়েবসাইট থাকে— কোনদিন গুগল যদি আপনার ওয়েবসাইটটাকে পছন্দ না করে এবং আপনার ওয়েবসাইটের সাথে বাজে কিছু করে ফেলে তাহলে আপনার রক্ষে নেই। 

হতে পারে গুগলের কোন আপডেটের কারণে আপনার ওয়েবসাইট একদম নিচে নেমে গেল অথবা হ্যাক হলো অথবা কোন ম্যালওয়ার ঢুকল। এতে আপনি যদি মাসে দশ হাজার ডলার ইনকাম করতেন তাহলে কিন্তু সেটা একদম শূন্যের কোটা নেমে যাবে।  

কারণ, আপনার ইনকাম সোর্স কিন্তু মাত্র একটা ওয়েবসাইটেই! আর কোন ইনকাম সোর্স আপনার নেই। এক্ষেত্রে এই ওয়েবসাইটটাকে যদি কেউ এটাক করে বা এই ওয়েবসাইটের কোন ক্ষতি হয় তাহলে কিন্তু আপনার আর ইনকামের পথই রইল না৷ 

এটা একটা সাইট থাকার একটা বড় রিস্ক। দুই তিনটা ওয়েবসাইট থাকলে এই রিস্কটা থাকত না।  এটা হলো দুই তিনটা ওয়েবসাইট রাখার একটা ভালো দিক। 

এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা। 

আপনার কোনটা করা উচিত? আপনি কি একটা ওয়েবসাইট রাখবেন না-কি দুই তিনটা ওয়েবসাইট রাখবেন?

আপনার জন্য রেকমেন্ডেশন থাকবে, আপনি দুই দিকেরই ভালো দিকটা গ্রহণ করেন।

যেমন আপনি একটা ওয়েবসাইট খুলবেন তারপর সেটা যতদিন না পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখবে ততদিন আপনি অন্য কোন ওয়েবসাইট খোলার ব্যাপারে চিন্তাও করবেন না।

এই সফলতা টা আসলে কি? 

এই সফলতাটা একেকজনের কাছে একেক রকম। হয়তো কেউ মনে করে যে আমাকে সফল হতে হলে মাসে এক হাজার ডলার ইনকাম করতে হবে। আবার কেউ মনে করে পাঁচ হাজার ডলার ইনকাম করতে হবে। তাই, এটা আপনার উপর নির্ভরশীল আপনি আপনার সফলতার রেঞ্জটা কতটুকু ধরবেন।

অর্থাৎ, একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট আপনি সেট করে নেবেন যেটা এচিভ না হওয়া পর্যন্ত আপনি অন্য কোন দিকে তাকাবেন না। এরপর, আপনি একটা সিস্টেম দাঁড় করাবেন। এমন পর্যায়ে ওয়েবসাইটটাকে নিয়ে যাবেন, যেন আপনি যদি ওই ওয়েবসাইটটার পেছনে সারা দিনে সময় না-ও দেন তা-ও যেন ওটার কাজ থেমে না থাকে।  আপনার হায়ারকৃত অন্যান্য মানুষরা যাতে ওটার কাজ করার জন্য থাকে। 

এক্ষেত্রে আপনি যদি প্রথম প্রথম নিজের ওয়েবসাইটের আর্টিকেলগুলো নিজে লিখে থাকতেন, তাহলে এই পর্যায়ে এসে আপনি যেভাবে আর্টিকেলগুলো লিখতেন সেটার একটা ডকুমেন্ট করে তারপর দুইজন রাইটারকে হায়ার করে তাদেরকে ওই ডকুমেন্ট দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে, কিভাবে আর্টিকেল লিখতে হবে, কিভাবে কাজ করতে হবে। 

এর ফলে, আপনি কাজ না করলেও তারা দুজন আপনার কাজ করে দেবে। এরপরে আপনি আরেকটা ডকুমেন্ট বানাতে পারেন যে, আপনি কিভাবে আপনার আর্টিকেলগুলো পাবলিশ করেন, কিভাবে ফরম্যাটিং করেন, কিভাবে ইমেজ সেট করেন, কিভাবে ইন্টারনেট লিংক করেন ইত্যাদি। 

এই ডকুমেন্টটা আবার আরেকজনকে হায়ার করে তাকে দিয়ে বলবেন আপনার পোস্টগুলো এই ডকুমেন্ট অনুযায়ী পাবলিশ করতে। এক্ষেত্রে আপনারা আর পাবলিশ করার জন্যও সময় দেয়া লাগছে না।

আরো কাওকে হায়ার করতে পারেন যে আপনার কীওয়ার্ড রিসার্চ করে দেবে। তাকেও আপনি দেখিয়ে দেবেন যে— কিভাবে আপনি কীওয়ার্ড রিসার্চ করতেন, আপনার মেথডটা কি। তাকে শিখিয়ে দেয়ার পরে সে আপনার কী-ওয়ার্ড রিসার্চের এর কাজটা করে দেবে।

এভাবে আপনি ধীরে ধীরে মানুষজন হায়ার করে তারপরে আপনার জায়গাটা রিপ্লেস করবেন, যাতে আপনার কাজগুলো তারা করে দেবে টাকার বিনিমযে। এতে আপনার সেখানে উপস্থিত না থাকলেও চলবে, আপনি অন্য কাজেও মনোনিবেশ করতে পারবেন।

এই পর্যায়ে এসে আপনি আরেকটা ওয়েবসাইট নিয়ে ভাবতে পারেন। আরেকটা ওয়েবসাইট খোলার পরেও আবার সেই একটা পয়েন্ট এচিভ করলেন। তারপরে আবার এই ওয়েবসাইটের জন্য মানুষজন হায়ার করে, এই দ্বিতীয় ওয়েবসাইটের দায়িত্বও তাদের হাতে তুলে দিতে পারেন। 

কিন্তু রেকমেন্ডেশন থাকবে দুইটা ওয়েবসাইট থাকাই ভালো। খুব বড়জোর তিনটা ওয়েবসাইট রাখতে পারেন কিন্তু এর বেশি রাখা উচিত না। এতে যতই মানুষজন হায়ার করে তাদের উপর ছেড়ে দেন, তবুও আপনার কিছু না কিছু মনোযোগ আপনার ওয়েবসাইটের উপর রাখতেই হবে। 

যদি তিনটা ওয়েবসাইটের বেশি ওয়েবসাইট আপনার থাকে তাহলে আপনি কোনটার উপরই বেশি ভালো মনোযোগ দিতে পারবেন না। আপনার যদি ইচ্ছে হয়, তিনটা ওয়েবসাইটের পরেও আরও ওয়েবসাইট খুলবেন তাহলে প্রথম তিনটা ওয়েবসাইটের মধ্য থেকে যেকোনো একটা ভালো প্রফিটে সেল করে দিয়ে তারপরে নতুন আরেকটা ওয়েবসাইট সম্পর্কে ভাবতে পারেন।

পুরোটা পড়লে আশা করি বুঝতেই পারছেন আপনার কোনটা করা উচিত, একটা রাখবেন না-কি দু’টো! 

Similar Posts