সামনের দিন গুলোতে নিশ সাইটের ভবিষ্যত কী?

AI এর উৎপাত বাড়ার পর থেকে সবার মাথায় একটাই প্রশ্ন— সামনের দিন গুলোতে নিশ সাইটের ভবিষ্যত কী? AI ব্লগিংয়ের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে কি-না, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করার এই রাস্তাটা বন্ধ হয়ে যাবে কি-না ইত্যাদি। 

মোদ্দাকথা, কী হতে পারে দুই থেকে তিন বছর পরে? কন্টেন্ট রাইটিং নামক সেক্টরটা কি আদৌ বেঁচে থাকবে? 

এই প্রশ্নের উত্তর সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। প্রশ্নের উত্তর নেগেটিভ ও হতে পারে, আবার পজিটিভ ও!

এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা জানিনা কেউই। তবে না জানলেও, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজেরা কিছুটা ধারণা করতে পারি যে, কিছু একটা হবে এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে পারি। 

এসব ব্যাপারে সবসময়ই ” খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে ” এমন ধারণা করাই ভালো।  এতে আগাম সতর্ক হওয়া যায়। আর যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে সেটা বোনাস পয়েন্ট। সতর্ক থাকতে তো ক্ষতি নেই। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি, সামনে খারাপ কিছুই আসতে যাচ্ছে। এটা ধরে নিয়ে এখানে কিছু আলাপ আলোচনা করা যাক। 

AI কি ব্লগিংকে শেষ করে দেবে? 

এখন আপনি যদি গুগলে কিছু লিখে সার্চ করেন, মানুষ প্রদত্ত অর্গানিক রেজাল্টের আগেই — শুরুতেই গুগল AI Generated একটা উত্তর দিয়ে রাখে। এরপরে নিচে অর্গানিক রেজাল্ট গুলো রাখছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এতে কী ট্রাফিক কমবে?

—   হয়তো কমবে। কমার সম্ভাবনাই বেশি। কতটুকু কমবে, সেটা ধারণা করা যাচ্ছে না।  তবে, ঘটনা এমন ঘটলে ট্রাফিক কমাটাই স্বাভাবিক। পরিমাণটা কতটুকু সেটা বুঝতে না পারলেও— ভালো আকারেই ট্রাফিকের পরিমাণ কমবে, সেটাই ধরে নেয়া উচিত। 

ধরুন, AI আসার কারণে গুগল থেকে, সার্চ ইঞ্জিন থেকে ট্রাফিক অনেক কমবে। এক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি? 

এর দু’টো সমাধান হতে পারে —

  1. বেশি বেশি কন্টেন্ট দেয়া। 
  2. AI থেকে আইডিয়া / আউটলাইন নিয়ে তার ওপরে নিজে কাজ করা। 

আগে যেখানে একটা কন্টেন্ট মাসে এক হাজার পেইজ ভিউ আনতো, সেখানে এখন AI আসার কারণে প্রায় অর্ধেক পেইজ ভিউ কমে পাঁচশ পেইজ ভিউ আসছে। 

যেহেতু AI এসেছে, আপনি AI দিয়ে অমন দশটা আর্টিকেল প্রডিউস করতে পারেন সহজেই। যে ট্রাফিকটা কমছিল, সেটার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য AI দিয়ে বেশি পরিমাণ আর্টিকেল প্রডিউস করতে হবে।  

কিন্তু, এই টেকনিকে আবার  দু’টো ঝামেলা আছে। 

  1. AI দিয়ে যে কন্টেন্টটা প্রডিউস করবেন, সেটার কোয়ালিটি কি আদৌ ভালো হবে? গুগলে র‌্যাংক করতে পারবে? সাস্টেনেইবলি র‌্যাংক করতে পারবে? 

যদি এমন হয় যে, আজকে AI এর লেখা একটা আর্টিকেল গুগলে র‌্যাংক করলো। কিন্তু আগামীকালই দেখা যাবে যে — একটা হিউম্যান রাইটিং অর্গানিক আর্টিকেল, AI লিখিত আর্টিকেলটাকে পেছনে ফেলে দিলো, তাহলে তো হবে না।  AI কি পারবে হিউম্যান রাইটিং টেক্কা দিতে?  

      2.গুগল কি AI লিখিত কন্টেন্ট পছন্দ করবে?

গুগল সাধারণত অথেনটিক কনটেন্টই পছন্দ করে থাকে। এমন কেইস বহু দেখা গেছে যে— অনেক AI লিখিত কন্টেন্ট সমৃদ্ধ ওয়েবসাইটের ট্রাফিক অনেক বাড়তে থাকলেও, হঠাৎ করে একদম কমেও গেছে। 

এজন্য, হুবহু AI এর লেখা সাবমিট না করে AI থেকে টপিক রিলেটেড আইডিয়া নিয়ে নিজে সেটার ওপর কাজ করা বা কাওকে দিয়ে করানো। 

এক্ষেত্রে, AI থেকে আর্টিকেল লিখিয়ে নিয়ে সেটাকে অথেনটিক রূপ দেয়া যেতে পারে কিছু কাটছাট করে, কিছু অলংকার পরিয়ে। 

তবে এই টেকনিক যে খুবই উপকারী — তা বলা যাচ্ছে না। তবে হুবহু AI লিখিত কন্টেন্ট পাবলিশ করার চেয়ে কিছুটা হলেও উপকারী।  এটা কাজ করতেও পারে, না-ও করতে পারে। একজন Niche Site Owner হিসেবে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কোন দিকে আগাতে চান। 

ট্রাফিকের জন্য শুধু গুগলের ওপর নির্ভরশীলতা:

এই কাজটা খুবই বিপজ্জনক ; ট্রাফিকের জন্য শুধু গুগলের ওপর নির্ভরশীল হওয়া। 

আপনি যখন কোনোকিছুর জন্য নির্দিষ্ট একটা মাত্র সোর্সের ওপর নির্ভরশীল হবেন— হতে পারে ট্রাফিক সোর্স, ইনকাম সোর্স বা যেকোনো কিছু, তখন আপনার রিস্কের পরিমাণ অনেক বেশি থাকবে। কারণ, ঐ একটা সোর্স কোনো কারণে ভেঙে গেলে আপনার পুরো সাইটটা ক্ষতির মুখে পড়বে। 

এজন্য বলা হয়— ” Don’t put all your eggs in one basket ” । এতে যদি বাস্কেটটা পড়ে যায় তাহলে পুরোটাই লস হয়ে যাবে।  

এজন্য প্রধান ট্রাফিক সোর্সের পাশাপাশি একটা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ট্রাফিক সোর্স ক্রিয়েট করার দিকে মনযোগী হওয়া উচিত। 

সেকেন্ড ট্রাফিক সোর্স হতে পারে— ইউটিউব চ্যানেল, সাবরেডিট, টুইটার একাউন্ট, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি যেখানে আপনার ভালো লাগে সেখানে একটা ট্রাফিক সোর্স গ্রো করতে পারেন। 

একসাথে পাঁচ ছয়টা সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট খোলার দরকার নেই। এক্ষেত্রে ইউটিউবটাকে প্রায়োরিটি দেয়া যেতে পারে। কারণ, ইউটিউব প্লাস ব্লগিং— একদম সোনায় সোহাগা বলা যায়।  

ইউটিউব চ্যানেল থাকলে সেখানে আপনার একটা অডিয়েন্স তৈরী হবে। তাদের কিছু সংখ্যকের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক যেতে পারে। আবার চ্যানেলে ঐ অডিয়েন্সকে মনিটাইজ করতে পারেন। 

এই ব্যাপারটা আপনাকে একটা সোর্সের রিস্ক থেকে রেহাই দেবে। 

Monetization Opportunity :

মনিটাইজেশনের বেলায়ও অনেকেই লাগাতার গৎবাঁধা উপায়ই অবলম্বন করেন। হয়ত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা ডিসপ্লে অ্যাড। 

এগুলো থাকা ভালো।  কিন্তু এর পাশাপাশি একটা Third Monetization Opportunity রাখা উচিত।  সেটা হতে পারে— 

  • আপনার একটা ইউটিউব চ্যানেল থাকলে সেখানে Adsense দিলে কিছু টাকা পাবেন।
  • চ্যানেলটা একটু বড় হলে স্পন্সর্ড ভিডিয়ো করতে পারেন। 
  • ইনস্টাগ্রামে স্পন্সরশীপ ভিডিয়ো নিতে পারেন।

এরকম অনেক উপায় আছে যেগুলোর মাধ্যমে মনিটাইজেশন করা সম্ভব। যেখান থেকে আপনার একটা এক্সট্রা ইনকাম আসবে। 

মূলকথা — এতদিন যেভাবে যে রুলস ফলো করে সবাই আগাচ্ছিলো, এখন সেই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগাতে হবে। আগে হয়ত, কম পরিশ্রমে দু’চারটা কাজ করে ফেলে রাখলেও ইনকাম আসতো। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব না। 

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী AI।  এঁকে টেক্কা দিতে হলে আপনার আরো পরিশ্রমী হতে হবে। সবার আগে—  ট্রাফিক সোর্স বাড়াতে হবে। কারণ, শুধু ব্লগিং করে অর্গানিক ট্রাফিক পাবার সম্ভাবনা খুবই কমছে। সুতরাং, ভবিষ্যৎে কি হবে তা বলা না গেলেও, এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া ভালো ।

Similar Posts