ব্লগিং ক্ষেত্রে একটা এক্সপেন্সিভ ভুল (এবং ভুলের গোছানো সমাধান)

আসুন, আজ আপনাদের ব্লগিং জীবনের একটা এক্সপেন্সিভ ভুলের গল্প শোনাই।  যে ভুলের গল্পটি শুনলে আপনারাও হয়তো এর থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন! 

— আমি প্রায় দেড় বছর আগে আমার তিন নাম্বার ব্লগটা শুরু করি। যেটা ছিল “হোম অফিস” নিয়ে। অর্থাৎ, বাসা বাড়িতে বসে কিভাবে অফিস করা যায়,  কীভাবে সাজানো যায়, কীভাবে শুরু করা যায়- এমন একটা ব্যাপার নিয়ে কন্টেন্ট লিখতাম। 

কিন্তু ওই ব্লগটা করার বেলায় আমি কিছু ভুল করে ফেলি, যার কারণে দেড় বছর পরেও এসে ওই ব্লগে ট্রাফিক খুব বেশি একটা বাড়েনি। এখনো ওই ব্লগে ট্রাফিক প্রতিমাসে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পেইজ ভিউয়ের মতো এসে থাকে, যার পরিমাণ খুবই কম। 

সাধারণত, এর থেকেও বেশি ট্রাফিক আসার কথা। কিন্তু ওই ভুলের কারণে পর্যাপ্ত ট্রাফিকটা এই ব্লগে আসেনি।

ভুলটা কি ছিল? 

— আমি যখন টপিকটা সিলেক্ট করি, যখন চিন্তা করি যে হোম অফিস নিয়ে ব্লগ বানাবো, তখনই আমার মাথায় অটোমেটিক্যালি অনেক কিছু চলে এসেছিল। অনেক টপিক চলে এসেছিল যে, আমি হোম অফিস নিয়ে কি কি বিষয় লিখতে পারি। 

এরপর অনেকগুলো টপিক সিলেক্ট করে সব গুলো নিয়ে কাজ করতে নেমে যাই। কিছুদূর গিয়ে দেখি আমার সব গুলো আঙুলের ডগা ভিজলেও কোনো আঙুলই ঠিকঠাক ভেজেনি অর্থাৎ, কোনো কাজই ভালোভাবে করা হয়নি।  শুধু প্রত্যেকটা ক্যাটাগরি আমি ছুঁয়ে গিয়েছি।

যেমন, প্রথমেই আমি শুরু করেছিলাম হোম অফিস নিয়ে একদম সাধারণ একটা ক্যাটাগরি – “অফিস ডেস্ক”। যেখানে আমি সাধারণ একটা অফিসে যেরকম ডেস্ক ব্যবহার করা হয়, ওগুলো নিয়ে কথাবার্তা বলা শুরু করেছিলাম। 

এর পরে,  স্ট্যান্ডিং ডেস্ক নিয়েও কথা বলা শুরু করি, যেটা বাংলাদেশ খুব একটা অ্যাভেইলেবল না হলেও বাইরের দেশে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও অফিস চেয়ার নিয়ে লেখা শুরু করি। 

বলা যায়, তখন টুকিটাকি সব ব্যাপার নিয়ে লেখা শুরু করি। কারণ আমার মাথায় ছিল যে, আমার সবকিছু কভার করতে হবে। এগুলো ছাড়াও অফিসের লাইটিং নিয়ে, ডেকোরেশন নিয়ে, এমনকি  পেইন্টিং নিয়েও আমি কিছু কনটেন্ট দেই। 

এভাবে বিভিন্ন টপিকে পদাচরণ করতে গিয়ে পুরো ব্যাপারটাকে একদম ছড়িয়ে ফেলি, যার কারণে গুগলের কাছে আমার ব্লগটা তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কোনো ক্ষেত্রেই অতটা অথরিটি বিল্ড আপ করতে পারেনি।

তাহলে কী করা উচিত ছিল আসলে? 

—যে কাজটা আমি এখন করে থাকি ভুল শোধরানোর পরে, তা হচ্ছে- আপনার সবগুলো ক্যাটাগরি আপনার কভার করতে হবে তা না তবে যে ক্যাটাগরিটা ধরবেন না কেন সেটা একদম ফুলফিল করে তারপরে অন্য ক্যাটাগরিতে যাওয়া উচিত। 

এখন যদি আমি হোম অফিস নিয়ে ব্লগটা খুলতাম তাহলে এটা মাথায় রাখতাম যে, আমার হোম অফিসের সবগুলো ক্যাটাগরি কভার করার কোন প্রয়োজন নেই। এখানে আমি একদম টপ দুই তিনটা ক্যাটাগরি মাথায় রাখতাম। 

যেগুলো সম্পূর্ণভাবে কভার করতাম।এর মধ্যে হতে পারতো- অফিস ডেস্ক, অফিস ডেকোরেশন, চেয়ার বা এরকম দুই তিনটা ক্যাটাগরি মাথায় রাখতাম। একসাথে বেশি করতে গিয়ে  সবগুলো ছড়িয়ে ফেলতাম না।

এভাবে দুই তিনটা ক্যাটাগরির মধ্যেও আমি আবার ক্লাস্টার করি। ক্লাস্টার হল— 

ধরুন, আমি এখন স্ট্যান্ডিং ডেস্ক নিয়ে আগাবো। যেটার জন্য আমি বহু আগে একটা কাজ করতাম যে, পিপল অলসো আস্ক অপশনে গিয়ে টপিকটা নিয়ে কী-ওয়ার্ড রিসার্চ করতাম। অর্থাৎ এই টপিকটাকে ফোকাসে রেখে তারপর এটা সম্পর্কে যাবতীয় কী-ওয়ার্ড রিসার্চ করে কন্টেন্ট দিতে থাকতাম। 

কিন্তু, এখন আর আমি এই কাজটা করছি না। এখন যেটা করছি, কোন একটা ক্যাটাগরির ভেতরেও আবার ক্লাস্টার করি। 

ক্লাস্টার কী?

এক কথায় বলা যেতে পারে- ঘরের ভেতর ঘর করা বা ক্যাটাগরির ভেতরে ক্যাটাগরি করা। উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। যেমন—

একটা ক্লাস্টার হতে পারে- ধরুন, স্ট্যান্ডিং এর একটা ব্যাপার হল সেট-আপ। এখন আমি এই স্ট্যান্ডিং ডেস্কের সেট-আপ নিয়ে পাঁচ-দশটা কীওয়ার্ড বের করে রিসার্চ করি।

আরেকটা ক্লাস্টার হতে পারে স্ট্যান্ডিং ডেস্কের কস্ট।  একটা ডেস্কের দাম কেমন হতে পারে, সেট করতে কত খরচ হতে পারে ইত্যাদি। 

আবার আরো একটা ক্লাস্টার হতে পারে, স্ট্যান্ডিং ডেস্কের মেইনটেইন্যান্স। কিভাবে এটাকে টেক কেয়ার করা যায়, ভালো রাখা যায় ইত্যাদি।  আবার আরেকটা হলো, স্ট্যান্ডিং ডেস্কের যাবতীয় সমস্যা এবং তার সমাধান। 

এভাবে আপনার অনেকগুলো ক্লাস্টার খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে। এখন এই ক্লাস্টার গুলোর আইডিয়া কিভাবে পাবেন? 

— অবশ্যই আপনাকে নিজের মাথা থেকে বের করতে হবে। 

এজন্য আপনাকে রিসার্চ করতে হবে, একটু খোঁজখবর নিতে হবে।  আপনার কম্পিটিটরদের দিকে নজর রাখতে হবে। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার কোন ক্যাটাগরির কী কী ক্লাসটার বের করা সম্ভব। এগুলোর মধ্যে আবার কয়টা কী-ওয়ার্ড রিসার্চ করা যাবে। 

প্রতিটা ক্লাসটারে আপনি পাঁচ – দশটা করে কী-ওয়ার্ড সিলেক্ট করবেন। ব্যাপারটা হলো- প্রতিটা ক্লাস্টার কিন্তু ওই ক্যাটাগরির ভেতরেই থাকবে। অর্থাৎ আপনি যদি স্ট্যান্ডিং ডেস্ক নিয়ে লেখেন, তাহলে স্টান্ডিং ডেস্ক এর ভেতরেই এর নানাবিধ ক্লাস্টার  থাকবে। এই ক্যাটাগরির বাইরে যাবেনা।

কিন্তু কী-ওয়ার্ড গুলো অগোছালো না হয়ে, থাকবে ক্লাস্টারের ভেতরে। অর্থাৎ ক্লাসটার অনুযায়ী ভাগ করা থাকবে। এতে আপনার ওই টপিকটা পরিপূর্ণভাবে কভার হবে। 

আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে একটা পার্টিকুলার জায়গায় আপনার অথোরিটি বিল্ড-আপ হয়। অনেকেই এক্ষেত্রে যে ভুলটা করে— একটা ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক জায়গায় ছড়িয়ে যায়। 

অনেক জায়গায় ছড়ানো যাবে না। আপনার প্রত্যেকটা ক্যাটাগরি একদম পরিপূর্ণভাবে কভার করতে হবে। এজন্য প্রত্যেকটা ক্যাটাগরির মধ্যে ক্লাস্টার করার কোন বিকল্প নেই। 

ক্লাস্টারের আরো একটা উদাহরণ হতে পারে— ধরুন আপনি কোন Pet রিলেটেড টপিক নিয়ে ব্লগ করবেন। এক্ষেত্রে পোষা বিড়ালকে বেছে নিলেন ক্যাটাগরি হিসেবে।  সেক্ষেত্রে আপনার ক্যাটাগরির  ক্লাস্টার গুলো এমন হতে পারে— বিড়ালের ফুড, টেক কেয়ার, মেইনটেন্যান্স, আচরণ, স্বাস্থ ইত্যাদি। 

তাহলে হলো কী- বিড়ালটা হলো আপনার ক্যাটাগরি। ক্যাটাগরির মধ্যে ক্লাস্টার হলো- বিড়ালের স্বাস্থ্য। এখন বিড়ালের স্বাস্থ্যের এই ক্লাস্টারের মধ্যে ৫-১০ টা কীওয়ার্ড বের করবেন। 

কীওয়ার্ড গুলো হতে পারে— জ্বর, মাথা ব্যথা, হাতে ব্যথা, বিড়ালের কোমড়ে ব্যথাসহ এনিথিং। অর্থাৎ, আপনাকে কমপক্ষে ৫-১০ টা কীওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে প্রতিটা ক্লাস্টারের মধ্যে এবং গোছানো কন্টেন্ট দিতে হবে সব নিয়ম-কানুন মেনে।

আশা করা যায়, এক্সপেন্সিভ ভুলের এমন গোছানো সমাধান মেনে চললে আপনার ব্লগও সাফল্যের মুখ শিগগিরই দেখবে!

Similar Posts